Monday, December 1, 2025

অলৌকিকভাবে প্রাণে বাঁচলেন খোকন! ফুসফুস ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল গাছের ডাল

Share

ফুসফুস ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল গাছের ডাল

জীবন-মৃত্যুর মাঝে একটুখানি ব্যবধান। এক মুহূর্তের দুর্ঘটনাই কেড়ে নিতে পারত প্রাণ। তবে পিজি হাসপাতালের চিকিৎসকদের দক্ষতায় অলৌকিকভাবে নতুন জীবন ফিরে পেলেন খোকন বিশ্বাস

পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা ৪৩ বছর বয়সী কনস্টেবল খোকন বিশ্বাস গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে নিজের বাড়ির বারান্দায় রাখা গাছের কাটাকাটা ডালপালার উপর পড়ে যান। দুর্ভাগ্যবশত, একটি ধারালো ডাল ডান বগলের নিচ দিয়ে ঢুকে তাঁর ফুসফুস ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হলেও, গুরুতর অবস্থার কারণে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালের (পিজি) ট্রমা কেয়ারে পাঠানো হয়। সেখানেই দক্ষ চিকিৎসকদের চেষ্টায় সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রাণ ফিরে পান তিনি।

জীবনের সঙ্গে লড়াই: ট্রমা কেয়ারে ভর্তি খোকন

খোকনের দুর্ঘটনার ভয়াবহতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। নিজে হাতে ডালটি টেনে বের করতে গেলে তা ভেঙে কিছুটা বেরিয়ে এলেও, মূল অংশটি শরীরের ভিতরেই থেকে যায়। প্রচণ্ড যন্ত্রণা এবং রক্তক্ষরণের মধ্যেও তিনি লড়াই চালিয়ে যান।

এসএসকেএমের শল্য বিভাগের চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের নেতৃত্বে চিকিৎসকেরা দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিতকুমার দাস, লোপামুদ্রা বসু এবং অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের প্রধান অর্পিতা লাহার সহযোগিতায় জটিল থোরাকোটমি অস্ত্রোপচার করা হয়

জটিল অস্ত্রোপচারের চ্যালেঞ্জ

শল্য চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,
“ডালটি শুধু ফুসফুস ফুঁড়ে যায়নি, সেটি শিরদাঁড়ার কাছেও আটকে ছিল। একটুও অসাবধানতা হলে বড় বিপদ হতে পারত। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।”

অস্ত্রোপচার চলাকালীন অ্যানাস্থেশিয়ার গুরুত্বও ছিল অপরিসীম। কারণ,
“রোগী যদি নড়াচড়া করত, তবে শিরদাঁড়া কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। পুরো বুক কেটে প্রায় সাত ইঞ্চি লম্বা গাছের ডালটি বের করে ফুসফুস মেরামত করা হয়,” বলেন চিকিৎসক অমিতকুমার দাস।

সতর্ক চিকিৎসা ও সুস্থতার পথে খোকন

ফুসফুসে সংক্রমণ এড়াতে কড়া পর্যবেক্ষণের জন্য খোকনকে আইটিইউ-তে রাখা হয় কয়েকদিন। এরপর শল্য বিভাগের সাধারণ শয্যায় স্থানান্তরিত করা হয়। এখন তিনি নিজের খাবার খেতে পারছেন, উঠে বসতে পারছেন এবং ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন

এসএসকেএম শল্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন,
“এই অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল ছিল, তবে আমাদের দক্ষ চিকিৎসক দল অত্যন্ত সফলভাবে এটি সম্পন্ন করেছেন। এটি হাসপাতালের সার্বিক সাফল্য।”

শেষ কথা

একটি দুর্ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে জীবন বদলে দিতে পারে। কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং দক্ষ শল্য চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা আবারও প্রমাণ করল, আশার আলো সবসময় থাকেখোকন বিশ্বাস আজ জীবিত শুধুমাত্র তাঁর আত্মশক্তি এবং এসএসকেএমের চিকিৎসকদের অসাধারণ দক্ষতার জন্য। এখন অপেক্ষা, তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন, সেই দিনটির!

ভারতের উপর পাল্টা শুল্ক চাপাচ্ছেন ট্রাম্প! ঘোষণা করলেন নির্দিষ্ট তারিখও

Read more

Local News