Sunday, November 30, 2025

অর্থ–কূটনীতিতে ‘ধুয়ে-মুছে সাফ’? সলমনের বিপুল লগ্নিতে খাশোগি হত্যার ইস্যুতে কেন নরম সুর ট্রাম্পের

Share

অর্থ–কূটনীতিতে ‘ধুয়ে-মুছে সাফ’?

সাত বছর ধরে আমেরিকার দরবারে কার্যত উপেক্ষিত ছিলেন সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ বিন সলমন। তাঁর মাথায় চাপানো ছিল সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার ভয়ংকর অভিযোগ। কিন্তু ২০২৫-এর নভেম্বরেই যেন বদলে গেল পুরো ছবিটা। আমেরিকা সফরে এসে লক্ষ কোটি ডলারের লগ্নির আশ্বাস দিলেন সলমন, আর তার পরেই রীতিমতো সুর বদলালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যে খাশোগি ইস্যু নিয়ে এত দিন তাঁকে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন, সেই প্রশ্ন উঠতেই সাংবাদিককে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন ট্রাম্প! আন্তর্জাতিক মহলে স্বভাবতই উঠছে প্রশ্ন—অর্থনৈতিক লাভেই কি ধুয়ে গেল ‘হত্যার পাপ’?

জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনায় সলমনকে স্বাগত ট্রাম্পের

ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে সলমনকে যেন রাজকীয় বরণ। লাল কার্পেট, সামরিক ফ্লাই পাস্ট এবং মার্কিন এয়ার ফোর্সের এফ-৩৫ জেটের আকাশে প্রদর্শন—সব মিলিয়ে অভ্যর্থনার আড়ম্বর নজর কেড়েছে বিশ্বের। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর ট্রাম্প ঘোষণা করলেন, রিয়াধে আসছে এক লক্ষ কোটি ডলারের বিশাল বিনিয়োগ। শুধু তাই নয়, সৌদিকে দেওয়া হবে ৪৮টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং ৩০০ অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক। পরিষ্কার, সৌদি আরবকে আগের চেয়েও শক্তিশালী মিত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে আমেরিকা।

খাশোগি হত্যার প্রশ্নে সাংবাদিককে ধমক, সলমনকে ‘নির্দোষ’ বললেন ট্রাম্প

বৈঠক শেষে সাংবাদিকেরা যখন খাশোগি হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুললেন, ট্রাম্প দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে সাংবাদিক মেরি ব্রুসকে থামিয়ে দেন। তাঁর বক্তব্য:

“যুবরাজ কিছুই জানতেন না। এই প্রশ্ন করলে তাঁকে বিব্রত করা হবে। এখন সেটার প্রয়োজন নেই।”

এমন মন্তব্যে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন—সলমনকে কার্যত ক্লিনচিট দিয়ে দিলেন ট্রাম্প। অথচ ২০১৮ সালে একই ট্রাম্প খাশোগি হত্যাকে ‘ভয়ঙ্কর অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

কেন এত বড় ‘ডিগবাজি’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পিছনে রয়েছে তিনটি বড় কারণ—
১) অর্থনৈতিক লাভ: সৌদির বিনিয়োগে আমেরিকার প্রতিরক্ষা খাত ও বিভিন্ন প্রযুক্তি সংস্থা বিপুল লাভের মুখ দেখবে।
২) মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা-সমীকরণে আমেরিকার ভূমিকা মজবুত করা
৩) ইজরায়েল-সৌদি সম্পর্ক পুনর্গঠনে ট্রাম্পের আগ্রহ

ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রিয়াধ চাইলে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে পারে। সলমনের মন্তব্যও ইঙ্গিতপূর্ণ—তিনি বলেছেন, “দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষেই আমরা আছি।” ইজরায়েলের নিরাপত্তা ইস্যুতে তৈরি হওয়া উদ্বেগ ট্রাম্প প্রশাসন নস্যাৎ করে জানিয়েছে, সৌদিকে এমন এফ-৩৫ দেওয়া হবে যাতে ইজরায়েলের জন্য কোনও ঝুঁকি না তৈরি হয়।

খাশোগি হত্যা: স্মরণ করিয়ে দেওয়া জরুরি

২০১৮ সালে ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসে ঢোকার পর খাশোগিকে আর জীবিত দেখা যায়নি। অভিযোগ, সলমনের নির্দেশেই তাঁকে খুন করে দেহ গুম করা হয়। মার্কিন গোয়েন্দাদের রিপোর্টেও যুবরাজের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত মিলেছিল। তবুও এবার সেই ইস্যু যেন গৌণ।

শেষ কথা

সলমনের লগ্নি-ঘোষণা কি খাশোগি হত্যার দাগ মুছে দিল? নাকি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে অর্থই শেষ কথা? ট্রাম্পের হঠাৎ সুর বদল প্রশ্ন তুলছে বিশ্বজুড়ে। মানবাধিকারের লড়াই কি এ বার অর্থনৈতিক স্বার্থে পিছনের সারিতে চলে গেল?

Read more

Local News