অভিমান ভেঙে, চেনা মেজাজে দিলীপ!
বাঙালির রাজনৈতিক মঞ্চে একসময় যিনি ছিলেন সবথেকে প্রাণবন্ত ও বিতর্কিত কণ্ঠস্বর, সেই দিলীপ ঘোষ কি আবার ফিরলেন তাঁর চেনা নির্ঘোষে? দীর্ঘদিনের অভিমানী নীরবতা ঝেড়ে ফেলে বাংলার বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি কি ফের রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় হয়ে উঠছেন? আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিতে।
আড়াল ভেঙে ফের ময়দানে!
লোকসভা ভোটের পর থেকেই কিছুটা আড়ালে ছিলেন দিলীপ ঘোষ। দল তাঁকে তাঁর পুরনো কেন্দ্র মেদিনীপুর থেকে লড়তে দেয়নি, বরং পাঠিয়েছিল বর্ধমান-দুর্গাপুরে, যেখানে তিনি পরাজিত হন। তারপর থেকেই দলের প্রতি তাঁর ক্ষোভ ও অভিমান স্পষ্ট হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু গত সপ্তাহে রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির বিধায়কদের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর ঘরে বৈঠক করে দিলীপ জানান দিলেন— তিনি ফিরছেন!
বিজেপির ত্রিফলা রণকৌশল!
বর্তমানে রাজ্য বিজেপির তিন প্রধান মুখ— সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষ। সুকান্ত বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী, শুভেন্দু রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। একমাত্র দিলীপের এখন কোনও সাংবিধানিক বা সাংগঠনিক পদ নেই। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবার বাংলায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির জন্য এই তিন নেতার মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে চাইছে। দিলীপের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, শুভেন্দুর সংগঠনিক দক্ষতা এবং সুকান্তর নেতৃত্বকে একত্রিত করেই বিজেপি রাজ্যে নিজেদের শক্তিশালী করতে চাইছে।
ফের সেই আগ্রাসী দিলীপ!
রাজনীতির মাঠে ফেরার পরপরই দিলীপের সেই পুরনো রণমূর্তি দেখা গেল খড়্গপুরে। দু’দিন ধরে পরপর তৃণমূলের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছুঁড়লেন তিনি। কখনও বললেন, ‘‘বাড়িতে ঢুকে মারব!’’ কখনও বা হুঁশিয়ারি দিলেন, ‘‘গলা টিপে দেব!’’ দিলীপের এই চেনা আক্রমণাত্মক ভঙ্গি অনেকেই মনে করছেন বিজেপির নির্বাচনী পরিকল্পনারই অংশ। কারণ সুকান্ত ও শুভেন্দু সাংবিধানিক পদে থাকার কারণে অনেক কিছু প্রকাশ্যে বলতে পারেন না, কিন্তু দিলীপের ক্ষেত্রে সেই বাধা নেই। ফলে বিজেপির আক্রমণাত্মক প্রচারের জন্য দিলীপকে সামনে আনা হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
দিলীপকে ফেরানোয় কার কী লাভ?
বিজেপির কর্মীদের একাংশের মতে, দিলীপ ঘোষ দলের মধ্যে এখনও অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর সাহসী ও স্পষ্টভাষী ভাবমূর্তি দলের নীচুতলার কর্মীদের চাঙ্গা করতে পারে। অন্যদিকে, শুভেন্দু ও সুকান্তর মধ্যে রাজনৈতিক সমন্বয় তৈরি করতেও দিলীপের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
দিলীপ অবশ্য এই কৌশল মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘আমি দলের কোনও পদে নেই, রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও যাচ্ছি না। সামাজিক কাজকর্ম করছি।’’ কিন্তু বাস্তবে যা ঘটছে, তা বলছে ভিন্ন কথা।
বিজেপির ‘ক্রিকেটীয় পরিকল্পনা’!
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য এই পরিকল্পনাকে সরাসরি স্বীকার করছেন না, কিন্তু ক্রিকেটের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘‘একটা টিমে যেমন ঝোড়ো ব্যাটার লাগে, তেমনই লাগে একজন অ্যাঙ্কর ব্যাটার, যে ইনিংসকে ধরে রাখবে।’’ বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপির পরিকল্পনায় দিলীপ হচ্ছেন সেই ঝোড়ো ব্যাটসম্যান, যিনি নির্বাচনের আগে প্রচারের ময়দানে দলকে চাঙ্গা করবেন।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বাংলায় নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন করে ত্রিফলা রণকৌশল সাজাচ্ছে, যেখানে দিলীপ ঘোষের পুরনো মেজাজই দলের মূল অস্ত্র হতে চলেছে।