অবৈধ ভারতীয় অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপে
আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অবস্থান সবারই জানা। নথি ছাড়া যারা আমেরিকায় বসবাস করছেন, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এই প্রেক্ষিতে, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও এ ধরনের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। তবে পাশাপাশি আমেরিকায় ভিসা পেতে ভারতীয়দের দীর্ঘ অপেক্ষার সমস্যাটিও তিনি মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছেন।
অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরে, বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস থেকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দিল্লি সবসময়ই বৈধ অভিবাসনকে সমর্থন করে। তার মতে, বৈধ অভিবাসন বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে অবৈধ অভিবাসনের ফলে যে নৈতিক এবং আইনগত সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, “অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে আমাদের নীতি খুবই স্পষ্ট। এটি শুধু আমেরিকার জন্য নয়, সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য। যদি কোথাও অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী থাকে এবং তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা যায়, তবে ভারত সরকার তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রস্তুত।”
আমেরিকায় অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের সংখ্যা
‘ব্লুমবার্গ’-এর একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আমেরিকায় প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীকে চিহ্নিত করেছে মার্কিন প্রশাসন। তাদের দেশে ফেরানোর জন্য ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে এই সংখ্যা সঠিক কিনা, তা যাচাই না করে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
জয়শঙ্করের মতে, “অবৈধ অভিবাসন শুধু একটি ঘটনা নয়; এর সঙ্গে আরও অনেক অবৈধ কার্যকলাপ জড়িয়ে থাকে, যা দেশের সুনাম ও নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।”
ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে ভারতের দাবি
বৈধভাবে আমেরিকায় যেতে ইচ্ছুক ভারতীয়দের জন্য ভিসা পাওয়ার দীর্ঘসূত্রিতা একটি বড় সমস্যা। জয়শঙ্কর এই বিষয়টিও ট্রাম্প প্রশাসনের নজরে এনেছেন। তিনি জানান, ভিসা পাওয়ার দীর্ঘ সময় শুধুমাত্র ব্যক্তিগত যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে না, বরং ব্যবসা, পর্যটন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপরও প্রভাব ফেলে।
বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, “ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ। ভিসা পাওয়ার দেরি এই সংযোগকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি ব্যবসা এবং পর্যটন ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করতে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা প্রয়োজন।”
ভারত-মার্কিন সম্পর্ক: বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা
বিদেশমন্ত্রীর এই সফরে শুধু অভিবাসন নয়, আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ়ের সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের ইতিবাচক মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে। জয়শঙ্কর জানান, ট্রাম্প প্রশাসন ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।
ভারতের অবস্থান কেন গুরুত্বপূর্ণ
ভারতের বিদেশনীতি সবসময়ই বৈধ অভিবাসনকে সমর্থন করে এবং দক্ষতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে। জয়শঙ্করের মতে, বৈধ উপায়ে ভারতীয়দের বিশ্বে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হলে তা শুধু তাদের জীবনের মানোন্নয়ন করবে না, বরং সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করবে।
অন্যদিকে, অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে নীতিগত অবস্থান নিয়ে ভারত যেমন নিজেদের দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিচ্ছে, তেমনই বৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে যেকোনো বাধা দূর করতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
উপসংহার
অবৈধ অভিবাসন রোধে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপের প্রতি ভারতের সমর্থন স্পষ্ট। একই সঙ্গে বৈধ অভিবাসনের পথে থাকা বাধাগুলি দূর করার দাবি তুলে ভারত দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ নয়, বরং আন্তর্জাতিক নীতিমালাকেও সম্মান করে। এই ধরনের উদ্যোগ ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে বলেই আশা।
এবার পাকিস্তান থেকে খুনের হুমকি কপিল শর্মাকে! আতঙ্কের ছায়া বলিউডে