Monday, December 1, 2025

অন্তরে অন্য সুর, বাইরে বন্ধুত্ব? ভারতের উপর নতুন চাপের ইঙ্গিত ট্রাম্পের

Share

ভারতের উপর নতুন চাপের ইঙ্গিত ট্রাম্পের

ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক বহু দিন ধরেই দ্বিমুখী সুরে চলেছে। একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের দাবি করেছেন। তিনি বারবার জোর দিয়েছেন দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার প্রয়োজনীয়তার উপর। কিন্তু বাস্তবে যে ছবিটা উঠে আসছে, তা একেবারেই আলাদা। সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা নিয়ে ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে।

মূল সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার উপর নানা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা ও তার মিত্ররা। কিন্তু ভারত সেই অবস্থার মধ্যে থেকেও রাশিয়া থেকে তেল কিনতে পিছপা হয়নি। এতে আমেরিকার অভিযোগ, ভারত আসলে পরোক্ষভাবে রাশিয়ার অর্থনীতিকে মজবুত করছে। সেই তেল বিক্রির মুনাফা ইউক্রেন যুদ্ধ চালাতে ব্যবহার করছে পুতিন সরকার। তাই ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, রাশিয়াকে দুর্বল করতে হলে শুধু রাশিয়ার উপর নয়, তাদের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সহযোগীদের উপরও চাপ তৈরি করতে হবে। আর সেই কারণেই ভারতের দিকে নজর দিচ্ছে ওয়াশিংটন।

কয়েক দিন আগে মার্কিন অর্থসচিব স্কট বেসেন্ট স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, রাশিয়া এবং তার সঙ্গে জড়িত দেশগুলির উপর বাড়তি শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলে তারা অর্থনৈতিক ধাক্কা খাবে। সেই চাপই হয়তো মস্কোকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করবে। ট্রাম্পও একই সুরে বলেন, ভারতের মতো দেশগুলির উপর কঠোর শুল্ক আরোপের মাধ্যমেই রাশিয়ার প্রভাব কমানো সম্ভব।

‘দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস’-এর দাবি অনুযায়ী, ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে আবেদন করেছেন যেন তারা ভারত ও চিনের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপায়। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের সময় এই বার্তাই দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এক মার্কিন কর্তা বলেন, “আমরা প্রস্তুত। চাইলে এখনই শুল্ক বসাতে পারি। তবে চাই আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি।” অর্থাৎ ইউরোপীয় দেশগুলিও পাশে দাঁড়ালে ভারতের উপর এই আর্থিক চাপ আরও বাড়বে।

এদিকে, আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত। প্রকাশ্যে ট্রাম্প মোদীকে “খুব ভাল বন্ধু” বলেই সম্বোধন করছেন। এমনকি তিনি জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলতে তিনি আগ্রহী। কিন্তু তার মাঝেই রাশিয়া থেকে তেল কেনার প্রসঙ্গ তুলে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পের মতে, ভারতের এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ভারত বর্তমানে রাশিয়া থেকে তেল কেনার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। চিনও একই পথে হাঁটছে। এই পরিস্থিতি ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করেছে। ফলত, ভারত-আমেরিকা সম্পর্কেও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ভারত-আমেরিকা বন্ধুত্বে বড় ধাক্কা দিতে পারে।

ট্রাম্প নিজেও একসময় দাবি করেছিলেন, মোদীর চিন সফরের পর তিনি ভারতকে “হারিয়ে ফেলেছেন”। যদিও কিছু ঘণ্টা পর তিনি সেই মন্তব্য ফিরিয়ে নিয়ে ফের ভারতের প্রতি সদ্ভাব প্রদর্শন করেন। মোদীও জানিয়েছেন, ট্রাম্পের ইতিবাচক অবস্থানের প্রতিদান তিনি দেবেন।

তবুও দ্বন্দ্ব কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। প্রকাশ্যে বন্ধুত্ব ও বাণিজ্য প্রসারের আশ্বাস মিললেও, আড়ালে শুল্ক চাপানোর হুমকি ভারতের উপর চাপ বাড়াচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে—ট্রাম্পের মুখের বন্ধুত্ব কি শুধুই কূটনৈতিক মুখোশ, নাকি আসলেই দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার পথে? সময়ই তার উত্তর দেবে।

ওড়িশায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডির তল্লাশি, ১৩৯৬ কোটির প্রতারণা মামলায় উদ্ধার কোটি টাকার সম্পদ

Read more

Local News