অগ্নিগর্ভ মুর্শিদাবাদ, আর ইউসুফ পঠান!
চা খেতে খারাপ কী? বিশেষ করে যদি হয় মনোরম প্রকৃতিতে, সবুজে ঘেরা বিকেলে? কিন্তু সেই ছবির পেছনে যদি লুকিয়ে থাকে শত শত মানুষের আতঙ্ক, গুলির শব্দ আর অস্থিরতা—তবে প্রশ্ন উঠবেই। আর ঠিক সেটাই হল বহরমপুরের তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পঠানের সঙ্গে।
ইনস্টাগ্রামে এক গোধূলি বেলার পোস্ট—চায়ের কাপে চুমুক, ফুরফুরে হাওয়া, সঙ্গে একটুখানি ইংরেজি গান। ক্রিকেট মাঠের পরিচিত মুখ ইউসুফ পঠান যেন সংসদীয় দায়িত্ব ভুলে কিছুটা ছুটির আমেজেই ছিলেন! কিন্তু সেই সময়েই তাঁর কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ জ্বলছে অশান্তিতে। নতুন ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জেলাজুড়ে একাধিক এলাকা। শমসেরগঞ্জ, সুতি, জঙ্গিপুরে ছড়ায় হিংসা। পুলিশ চালায় গুলি, আহত হন দু’জন। প্রশাসন বন্ধ করে দেয় ইন্টারনেট পরিষেবা।
এই অবস্থায় সাংসদের ‘শান্ত বিকেল’-এর ছবি দেখে সাধারণ মানুষের একাংশ রীতিমতো ক্ষুব্ধ। অনেকেই ইনস্টাগ্রামে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, “খবর রাখেন তো?” কেউ লিখেছেন, “আপনার লোকসভা কেন্দ্রে রক্ত ঝরছে আর আপনি চায়ের ছবি দিচ্ছেন?”
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও চুপ করে থাকেনি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, “বাঙালিদের প্রতিনিধি হিসাবে বহিরাগতদের তুলে আনলে এমনটাই হয়।” শমীক ভট্টাচার্যের মতে, “তাঁকে (ইউসুফ) টিকিট দেওয়া হয়েছিল শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে।” এমনকি তৃণমূলের অন্দরেও অসন্তোষ রয়েছে। ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমি রাজি ছিলাম না ওর হয়ে প্রচার করতে। এখন বোঝা যাচ্ছে, আমাদের দুর্ভাগ্য। মানুষ বিপদে, আর সাংসদ মজা করছেন।”
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী মন্তব্য করতে না চাইলেও, স্পষ্ট ভাষায় জানান, “মুর্শিদাবাদে যা ঘটছে, তার পেছনে রয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব।” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী তো সরাসরিই বলেন, “ইউসুফ পঠানের মতো ‘ফুলবাবুরা’ ভোটের সময় অ্যাসাইনমেন্টে এসে যান, রাজনীতির সঙ্গে তাঁদের যোগ নেই।”
এখানে প্রশ্ন একটাই—লোকসভা ভোটে তারকা প্রার্থীদের তুলে আনার প্রবণতা কি জনমানস থেকে বিচ্ছিন্ন এক সাংসদ তৈরি করছে? ইউসুফ পঠান কি শুধুই এক জনপ্রিয় মুখ, যিনি মানুষকে ভুলে নিজের জগতে বুঁদ?
তবে, এই সমালোচনার মাঝেও তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ‘লাইক’ পড়েছে অনেক, এমনকি সচিন তেন্ডুলকরও আছেন সেই তালিকায়।
কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—একজন সাংসদ কি শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার মুখ, না কি তিনি নিজের কেন্দ্রের জনগণেরও মুখ? মানুষ উত্তর চায়, শুধুই ছবি নয়।