অক্ষয় তৃতীয়ায় জগন্নাথের প্রাণপ্রতিষ্ঠায় মমতা!
অক্ষয় তৃতীয়া—শুভ দিন, পূণ্য তিথি। এই মহালগ্নেই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে আজ হল দেবতার প্রাণপ্রতিষ্ঠা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতে করলেন মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন, আর প্রথম সন্ধ্যারতিও নিবেদন করলেন জগন্নাথের উদ্দেশে। অন্যদিকে, দিনটিতে ছিল রাজনৈতিক উত্তাপও। কাঁথিতে পাল্টা কর্মসূচিতে অংশ নিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
জগন্নাথ মন্দিরে ঐতিহাসিক মুহূর্ত
দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দিরে আজ সকালেই শুরু হয় যজ্ঞকুণ্ড ও কুম্ভকুণ্ড স্থাপনের প্রক্রিয়া। ইসকনের সন্ন্যাসীরা পাথরের বিগ্রহে এবং পুরীর রাজেশ দয়িতাপতির নেতৃত্বে পুরোহিতেরা কাঠের বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। রাধাকৃষ্ণের মূর্তিতেও ছিল প্রাণপ্রতিষ্ঠা। সকাল ১১টা ১০ থেকে ১১টা ৩০-র সেই মাহেন্দ্রক্ষণে রুদ্ধদ্বারে দেবতার অঙ্গে কুশের স্পর্শ দিয়ে সম্পন্ন হয় গুরুত্বপূর্ণ রীতি।
এরপর অনুষ্ঠিত হয় স্নান, নতুন বস্ত্র পরিধান এবং অর্পিত হয় ঐতিহ্যবাহী ‘৫৬ ভোগ’। বিকেল ৫টা থেকে ৫টা ১০ মিনিট—শুভ সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মন্দিরের দরজা খুলে দেন সর্বসাধারণের জন্য। প্রথম সন্ধ্যারতি নিজে করেন মমতা। একদিকে ধর্মীয় আবহ, অন্যদিকে রাজনৈতিক বার্তাও স্পষ্ট—রাজ্যে মমতার নেতৃত্বেই ধর্ম ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটছে, তা যেন বুঝিয়ে দিল এই আয়োজন।
কাঁথিতে শুভেন্দুর সনাতনী হিন্দু সম্মেলন
একই দিনে কাঁথিতে পাল্টা সুরে শোনা গেল বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর কণ্ঠ। দিঘার অনুষ্ঠান ঘিরে শাসক শিবির যখন ধর্মীয় আবহে ব্যস্ত, তখন কাঁথিতে ‘সনাতনী হিন্দু সম্মেলন’ আয়োজন করলেন শুভেন্দু। কলকাতা হাই কোর্টের শর্তসাপেক্ষ অনুমতি পেয়েই আজকের এই কর্মসূচি হয়।
তবে রাজ্য সরকার সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায় চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করলেও আজ সেই শুনানি হয়নি। ফলে আপাতত সম্মেলন আয়োজনের অনুমতি বহাল রয়েছে। আদালত স্পষ্ট করেছে—তিন হাজারের বেশি মানুষের জমায়েত করা যাবে না।
কেন্দ্রীয় রাজনীতির টানাপোড়েন
পাশাপাশি আজ পহেলগাঁও কাণ্ডের পরে প্রথমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বসে বৈঠকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে এই বৈঠকে বিভিন্ন কূটনৈতিক পদক্ষেপের পর্যালোচনা হয়। বিদেশমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পহেলগাঁওয়ের মর্মান্তিক ঘটনায় ২৬ জন নিরস্ত্র নাগরিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে এই বৈঠকের গুরুত্ব ছিল বেশ জোরালো।
খেলার মাঠেও উত্তেজনা
আজ মাঠেও ছিল উত্তেজনার ছোঁয়া। সুপার কাপের সেমিফাইনালে মোহনবাগান মুখোমুখি হয় এফসি গোয়ার। আর সন্ধ্যায় চেন্নাই সুপার কিংসের সামনে দাঁড়ায় প্লে-অফে ওঠার লড়াইয়ে থাকা পাঞ্জাব কিংস। আইপিএলের পয়েন্ট টেবিলে একদম নিচে থাকা ধোনিদের জন্য এই ম্যাচ অনেকটাই মর্যাদার।
উপসংহার:
ধর্ম, রাজনীতি আর খেলার উত্তেজনায় মিলেমিশে গেল আজকের অক্ষয় তৃতীয়া। দিঘায় দেবতার অভিষেকের আনন্দ যেমন হৃদয় ছুঁয়ে গেল, তেমনই রাজনীতির পাল্টা সুর আর মাঠের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই—সব মিলিয়ে আজকের দিন ছিল রঙিন, রোমাঞ্চকর ও ঐতিহাসিক।