স্যালাইন-কাণ্ড
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ প্রসূতি একই দিনে অস্ত্রোপচার করার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাদের মধ্যে এক জন, ২২ বছর বয়সী মামনি রুইদাস, শুক্রবার সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এছাড়া আরও তিন জনের অবস্থা গুরুতর, যার মধ্যে দু’জন এখনও ভেন্টিলেশনে এবং এক জন আইসিইউ-তে ভর্তি রয়েছেন। এই ঘটনায় একটি গুরুতর অভিযোগ সামনে এসেছে—সকল প্রসূতিদের যে স্যালাইন এবং ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, তার মান অত্যন্ত নিম্ন ছিল।
হাসপাতালে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকেই স্যালাইনের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তদন্তকারী দল গঠন করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর, এবং এদিন শনিবার, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী এবং স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান মহম্মদ আলাউদ্দিনকে কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে তলব করা হয়েছে। সেখানে তাদের বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
তদন্তের শুরু এবং ঘটনার পটভূমি
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে যেদিন পাঁচ প্রসূতির অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল, সেদিনই তারা অস্বাভাবিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অস্ত্রোপচারের পর কিছু সময়ের মধ্যে তাদের শরীরে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর মধ্যে মামনি রুইদাসের মৃত্যু ঘটে, যা সমস্ত পরিস্থিতিকে আরও গভীর সংকটে ফেলেছিল। অবস্থা খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য দফতর দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং ঘটনাস্থলে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়।
তদন্তকারী দলের সদস্যরা হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং অস্ত্রোপচারের রেজিস্টার খাতা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বিশেষভাবে, তাঁরা জানতে চান, সেই দিন অস্ত্রোপচারের সময়ে সিজার অপারেশন ইউনিটের প্রধান কে ছিলেন এবং কীভাবে ওষুধ এবং স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছিল।
স্যালাইন এবং ওষুধের মান পরীক্ষা
ঘটনার পর থেকে, প্রসূতিদের যে স্যালাইন এবং ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলির নমুনা ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে। বিশেষত, রিঙ্গার্স ল্যাকটেট (আরএল) স্যালাইন, যা সাধারণত স্যালাইন হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেটির মান নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন, স্যালাইন বা ওষুধের মানের কারণেই এই ধরনের সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এছাড়া, স্যালাইন, ওষুধ এবং স্পাইনাল অ্যানাস্থেসিয়া ব্যবহারের সঙ্গেও তদন্তকারীরা কাজ করছেন। তারা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন, বিশেষ করে অস্ত্রোপচার ইউনিটের সিনিয়র চিকিৎসক এবং অন্যান্য দায়িত্বশীলদের উপস্থিতি এবং তাদের ভূমিকা নিয়ে।
মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রশ্ন
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষ একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, তাঁদের অধীনেই সমস্ত অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা কাজটি হয়েছে। তবে এই দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া, স্যালাইন এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামের নমুনাও পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে ঘটনার কারণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সরকারি নির্দেশিকা এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পদক্ষেপ
ঘটনার পর, স্বাস্থ্য দফতর একটি সরকারি নির্দেশিকা জারি করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্যালাইন সরবরাহকারী সংস্থাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার পর, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর আরও বিস্তারিত তদন্তের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে এবং স্যালাইন সরবরাহকারী সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব এবং প্রভাব
এই ঘটনা শুধুমাত্র মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জন্যই নয়, পুরো রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের প্রশ্ন তুলছে। চিকিৎসার অভ্যন্তরীণ সিস্টেম, স্যালাইন এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মান, এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব- সবকিছুই এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, যে কোনও ধরনের অবহেলা বা গাফিলতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছে।
এই ঘটনার পর, হাসপাতালের সিস্টেম ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তদন্ত চলাকালীন, দ্রুতই এই ঘটনায় পুরোপুরি সঠিক তথ্য এবং প্রকৃত কারণ বের করে আনা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনও ঘটনা আর না ঘটে।
পৌষে এ বার সাধারণ চালের পিঠে নয়, বানিয়ে ফেলুন মুগ সামলি! রইল রেসিপি


