সেপটিক শক ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্যালাইন-কাণ্ডে মৃত প্রসূতি মামনি রুইদাসের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ২০ বছর বয়সী মামনির মৃত্যু হয়েছিল সেপটিক শক এবং মাল্টি অরগ্যান ফেলিওরের কারণে। শরীরে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণের ফলে বিষাক্ত দেহরস জমে যায়, যা শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।
এই ঘটনা ঘটেছিল একই দিনে। পাঁচজন প্রসূতিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করানোর পর তাঁদের প্রত্যেককে রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন (আরএল) দেওয়া হয়েছিল। এর পরেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই পাঁচজনের মধ্যে মামনির মৃত্যু হয় শুক্রবার সকালে।
স্যালাইনের মান নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনার পর থেকেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ব্যবহৃত স্যালাইনের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সংশ্লিষ্ট স্যালাইন এবং ওষুধের নমুনাগুলি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগে। ঘটনাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর একটি ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে স্যালাইন ও ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করেছে এবং হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছে। এছাড়া, মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী এবং স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধানকে এসএসকেএম হাসপাতালে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

মুখ্যসচিবের মন্তব্য
ঘটনার প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানিয়েছেন, কোনও ধরনের গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। তাঁর কথায়, “আমরা তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছি এবং এর ভিত্তিতে আরও বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। পরবর্তী পদক্ষেপ তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই নেওয়া হবে।”
প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা গেছে, অস্ত্রোপচারের সময় প্রোটোকল মেনে সিনিয়র চিকিৎসকের উপস্থিতি ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী, একজন সিনিয়র চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে জুনিয়র ডাক্তাররা এই ধরনের কাজ করেন। কিন্তু এখানে সেই নিয়ম মানা হয়নি। এছাড়াও, স্যালাইনের পাশাপাশি প্রসব-উত্তর ব্যবহৃত ওষুধ অক্সিটসিনও সঠিক নিয়ম মেনে প্রয়োগ করা হয়েছিল কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
স্যালাইন-কাণ্ডের সম্ভাব্য গাফিলতি
ময়নাতদন্ত এবং তদন্তে উঠে আসা তথ্যগুলো এই ঘটনার পেছনে চিকিৎসকদের গাফিলতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। মুখ্যসচিব স্পষ্ট করেছেন যে, এ ধরনের ঘটনা প্রোটোকলের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন এবং এটি প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ময়নাতদন্তে আরও দেখা গেছে, স্যালাইন ব্যবহারের সঙ্গে সংক্রমণের সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে এটি নিশ্চিত করতে আরও বিস্তারিত পরীক্ষা প্রয়োজন।
চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর আস্থা
এই ঘটনার পরে সাধারণ মানুষের মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কিছুটা কমতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একাধিক রোগীর অসুস্থ হওয়া এবং একজন প্রসূতির মৃত্যু চিকিৎসা ব্যবস্থার গাফিলতি এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের অভাবের দিকে ইঙ্গিত করছে।
তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। একইসঙ্গে, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
শেষ কথা
মামনির মতো একজন তরুণী প্রসূতির মৃত্যু নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক এবং এটি স্বাস্থ্য পরিষেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হওয়া উচিত। তদন্তের রিপোর্টের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। তবে এর পাশাপাশি, হাসপাতালগুলিকে সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার মান উন্নত করার দিকেও নজর দিতে হবে।
এই ঘটনা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলি তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতে, এমন ট্র্যাজেডি এড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।
সত্যিকারের সাধ্বী নাকি শুধুই লোকদেখানো! নেটপ্রভাবী হর্ষা রিচারিয়া নিয়ে কেন এত বিতর্ক?


