কারা নিয়মিত কুমড়োর বীজ খাবেন
সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাদ্যতালিকায় কুমড়োর বীজ এক জনপ্রিয় সংযোজন হয়েছে। সকালের ওট্স থেকে দুপুরের সালাদ— সর্বত্রই জায়গা করে নিচ্ছে এই পুষ্টিকর বীজ। আবার অনেকে অফিসে ছোট কৌটোয় ভরে রাখেন কুমড়োর বীজ, বিকেলে হালকা খিদে পেলে মুঠো করে খেয়ে নেন। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। বিশেষ করে ভিটামিন এ-এর উপস্থিতি চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
কিন্তু অনেক সময়ই আমরা মনে করি— উপকারী যে কোনও খাবার ইচ্ছেমতো খাওয়া যায়। আর এখানেই আসে সমস্যা। পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও কুমড়োর বীজ যে সকলের জন্য নিরাপদ, তা নয়। আবার সঠিক পরিমাণের বেশি খেলেও উপকারের বদলে ক্ষতিই হতে পারে।
নিচে জেনে নিন, কারা এই বীজ খাবেন না এবং কী ভাবে খাবেন—
কতটা কুমড়োর বীজ খাওয়া উচিত?
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে সর্বোচ্চ ২৮-৩০ গ্রাম কুমড়োর বীজ খেতে পারেন, যা প্রায় দুই টেবিল-চামচের সমান। এর বেশি নিয়মিত খেলে শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট ও ক্যালোরি জমতে পারে।
কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ সব ধরনের বীজই ওই সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে।
যাঁদের কুমড়োর বীজ খাওয়া উচিত নয়
১. হজমের সমস্যা যাঁদের আছে
কুমড়োর বীজে প্রচুর ফাইবার থাকে। পরিমিত পরিমাণে এটি পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করলেও অতিরিক্ত খেলে—
- গ্যাস
- পেটব্যথা
- পেট ভার হওয়া
- ডায়রিয়া
এর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া এতে থাকে তেল এবং ফ্যাটি অ্যাসিড, যা অতিরিক্ত হলে হজমে সমস্যা তৈরি করে।
২. যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখছেন
বহু মানুষ ওজন কমানোর জন্য বীজকে খাদ্যতালিকায় রাখেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে— কুমড়োর বীজে ক্যালোরি অনেক বেশি।
মুঠো মুঠো খেলে উল্টে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
৩. যাঁদের রক্তচাপ কম
কুমড়োর বীজে থাকা নির্দিষ্ট উপাদান রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই যাঁদের রক্তচাপ ইতিমধ্যেই কম, তাঁদের ডায়েটে এই বীজ রাখার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
৪. যাঁদের অ্যালার্জি আছে
অনেকের কুমড়োর বীজে অ্যালার্জি থাকে, যা প্রকাশ পায়—
- ত্বকে র্যাশ
- চুলকানি
- মাথাব্যথা
- বমিভাব
- পেটব্যথা
এর মাধ্যমে।
এমন উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করা উচিত।
৫. ছোটদের নয়
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কুমড়োর বীজ হজম করা কঠিন হতে পারে। এতে থাকা ফাইবার ও ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য অতিরিক্ত হয়ে পেটব্যথা, বমি বা অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। তাই শিশুকে এই বীজ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঠিক কী ভাবে খাবেন কুমড়োর বীজ?
- ভেজে খেলে হজম সহজ হয়।
- ওট্স, দই, স্মুদি বা সালাদে অল্প করে ব্যবহার করুন।
- দিনের মধ্যে দুই টেবিল-চামচের বেশি খাবেন না।
- রাতে খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ হজমের সমস্যা বাড়তে পারে।
শেষ কথা
কুমড়োর বীজ উপকারী— কিন্তু সব খাবারের ক্ষেত্রেই ‘পরিমিতি’ই মূল মন্ত্র। যাঁদের বিশেষ কোনও অসুখ রয়েছে বা ওষুধ খেতে হয়, তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডায়েটে এই বীজ যোগ করুন। সঠিকভাবে খেলে কুমড়োর বীজ শরীরের জন্য আশীর্বাদ, ভুলভাবে খেলে বাড়াতে পারে বিপদ!

