শিক্ষিকার মৃত্যু
ডানলপ খালসা মডেল স্কুলের এক শিক্ষক, জসবির কৌরের মৃত্যুতে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে আত্মহত্যা করেছেন তিনি, এবং তার পর থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। অভিযোগ, শিক্ষকতার প্রশিক্ষণের শংসাপত্র জমা দিতে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি, নানা বিষয় নিয়ে তাকে মানসিকভাবে অত্যাচার করা হচ্ছিল। তাঁর আত্মহত্যার পর এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তাঁর আত্মীয়-পরিজন ও প্রতিবেশীরা।
শনিবার সকালে, জসবির কৌরের পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা ঘণ্টাখানেক বি টি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা দাবি করেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, অথচ বিষয়টি গভীর তদন্তের দাবি রাখে। বরাহনগর ও দক্ষিণেশ্বর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং আশ্বাস দেন যে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জসবির দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ডানলপ খালসা মডেল স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলেন এবং তার আরও দুটি বছর চাকরির মেয়াদ ছিল। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকে বাধ্য করা হচ্ছিল শিক্ষকতার প্রশিক্ষণের শংসাপত্র জমা দেওয়ার জন্য, যদিও তিনি এর আগে শংসাপত্র জমা দেওয়ার জন্য যথাযথ সময় পেয়েছিলেন। এছাড়া, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি মানসিক চাপের শিকার হচ্ছিলেন বলে তার অভিযোগ ছিল। সামাজিক মাধ্যমেও তিনি এই বিষয়গুলি নিয়ে পোস্ট করেছিলেন, এবং অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়ে গিয়েছিলেন।
তাঁর সহকর্মী এবং প্রতিবেশীরা জানান, এই একক ঘটনা নয়। অনেক শিক্ষকই স্কুল কর্তৃপক্ষের মানসিক অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। এই বিষয়ে অভিযোগ করেছেন স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষিকা সীমা দাশগুপ্ত, যিনি জানিয়েছেন, ‘‘শুধু জসবির নয়, আমরা অনেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষের এই অত্যাচারের শিকার হয়েছি।’’ তিন বছর আগে নতুন অধ্যক্ষের যোগদানের পর থেকে এই মানসিক অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়, এমনটাই অভিযোগ করেছেন তারা।
জসবির কৌরের ভাই, জসবিন্দর সিংহ, অভিযোগ করেছেন যে, তার বোন ফেসবুক লাইভে অধ্যক্ষ এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘এটি একটি স্পষ্ট প্রমাণ, এবং আমরা চাই অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হোক।’’ তিনি আরও জানান, যদি শীঘ্রই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জসবিরের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের এক কর্মকর্তার মতে, ‘‘শিক্ষিকার অভিযোগের তদন্ত চলছে এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাদের খোঁজ চলছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
এই ঘটনাটি এখন সমাজের মধ্যে এক বৃহৎ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শিক্ষকতা পেশায় মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ নতুন নয়, তবে এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা সমাজে একটি বড় বার্তা দিয়েছে যে, শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং তাদের কাজের পরিবেশের বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

