শাহের মঞ্চে ভোটের যুদ্ধঘোষণা!
নেতাজি ইন্ডোরে রবিবারের বিজেপি সাংগঠনিক সম্মেলনে কর্মীদের সামনে যেন আগাম ভোটের প্রচার ভাষণই দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘পাঁচ সংকট’কে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারকে একের পর এক কটাক্ষে বিদ্ধ করলেন তিনি। শুধু তাই নয়, শাহ বিজেপি কর্মীদের হাতে তুলেও দিলেন আরও দুই ‘অস্ত্র’— অনুপ্রবেশ এবং হিন্দুদের উপর অত্যাচার।
তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে শাহের অভিযোগের কেন্দ্রে ছিল: হিংসা, দুর্নীতি, মহিলাদের উপর নির্যাতন, চাকরির বাণিজ্য এবং ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি। শাহ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বাংলাকে অপরাধ, বোমাবাজি ও অনুপ্রবেশের ঘাঁটি বানিয়ে দিয়েছেন।” তিনি সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, “সাহস থাকলে হিংসা আর রিগিং ছাড়া লড়ুন, জামানত জব্দ হয়ে যাবে দিদির।”
শাহ অভিযোগ করেন, মমতার সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সীমান্তে জমি দিচ্ছে না, কারণ “সীমান্ত খোলা রাখলেই অনুপ্রবেশ বাড়বে আর সেই ভোটব্যাঙ্কেই দিদি-ভাইপোর ভবিষ্যৎ নির্ভর করে।” হিন্দুদের উপর নির্যাতনের প্রসঙ্গে তুলে ধরেন মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনাও। বলেন, “সরকার বিএসএফ মোতায়েন চাইনি, কারণ তাহলেই হিন্দুরা রক্ষা পেত।” হাই কোর্টে বিজেপি মামলা করার পরে বিএসএফ মোতায়েন হয়— সে কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রসঙ্গে ফের মমতাকে তীব্র আক্রমণ করে শাহ বলেন, “পাকিস্তানের ভিতরে ঢুকে সন্ত্রাসীদের ধ্বংস করার পর আপনি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে অপারেশনের বিরোধিতা করলেন। আপনি দেশের মা-বোনদের আবেগ নিয়েও ছেলেখেলা করেছেন।” শাহ মাতৃশক্তিকে উদ্দেশ করে বলেন, “মমতাকে বুঝিয়ে দিন, সিঁদুর নিয়ে প্রশ্ন করলে কী হয়!”
নাগরিকত্ব ইস্যুতেও কড়া বার্তা দেন শাহ। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের ষড়যন্ত্রে হিন্দু শরণার্থীদের ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটা হচ্ছে। কিন্তু ভয় পাবেন না, সিএএ-তে আবেদন করুন, আমরা নাগরিকত্ব দেব।”
রাজ্য সরকারের দুর্নীতি নিয়ে শাহ জানান, মোদী সরকারের ১০ বছরে পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছে ₹৮.২৭ লক্ষ কোটি টাকা, যা আগের ইউপিএ জমানার চার গুণ। কিন্তু এই টাকাও সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। বলেন, “রাস্তায় চাকরি বিক্রি হয়, আর নেতাদের বাড়ি থেকে এত টাকা বেরোয় যে গুনতে গুনতে যন্ত্র খারাপ হয়ে যায়।”
রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগও তোলেন শাহ। বলেন, “সারা দেশে নির্বাচনী হিংসা কমে গেছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া। এখানে শত শত বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন।” সরাসরি হুঁশিয়ারি দেন, “২০২৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসব, আর অপরাধীদের মাটির তলা থেকেও খুঁজে বার করে শাস্তি দেব।”
সবশেষে কর্মীদের উদ্দীপ্ত করে শাহ বলেন, “২০২৪ সালে আমরা ৯৭টি আসনে এগিয়ে ছিলাম। মাত্র ৪-৫% ভোট বাড়লেই আমরা সরকার গঠন করব। সংকল্প করুন, ২০২৬-এ মমতার সরকারকে উপড়ে ফেলতে হবে।”
এবারের সম্মেলন যেন ছিল শুধুই একটি দলের কর্মসূচি নয়—একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধঘোষণা।
তৃণমূলের প্রতি বার্তা ছিল একটাই: এবার বিজেপি থামতে আসেনি, জিততে এসেছে।
জামাইষষ্ঠীর ভোজেও অম্বল নয়! পুষ্টিবিদের টিপসেই থাকুন হালকা আর হাসিখুশি 💚