লেকটাউনে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য
রবিবার রাতে লেকটাউন এলাকায় ঘটে গেল দুটি ভয়াবহ ঘটনা, যার ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে। শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে পুলিশ যখন বাধা দিতে গেল, তখন দুষ্কৃতীদের হাতে মারধরের শিকার হন তাঁরা। একদিকে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা, অন্যদিকে, একটি মহিলার সঙ্গে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে লেকটাউন থানার পুলিশ।
শব্দবাজির বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান
লেকটাউনের ভিআইপি রোডের কাছে বিসর্জন ঘাটের ঘটনা। অভিযোগ, সেখানকার কিছু যুবক নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটাচ্ছিলেন। স্থানীয়রা এই ঘটনা দেখে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অভিযুক্ত যুবকদের চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু পুলিশকে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি, তাদের উপরেই হামলা চালান ওই যুবকেরা। পুলিশের ওপর এই অত্যাচার চলাকালীন অভিযুক্তরা পালানোর চেষ্টা করেন, তবে পরে পুলিশের তৎপরতায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্তৃপক্ষকে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সোমবার তাঁদের আদালতে হাজির করা হবে।
মহিলার শ্লীলতাহানি: দুষ্কৃতীদের নির্মমতা
অন্যদিকে, একই বিসর্জন ঘাটে আরও একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে। এক মহিলার সঙ্গে কথোপকথনের সময় কয়েকজন যুবক অশ্লীল মন্তব্য করেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে এসে মহিলার স্বামীও আক্রান্ত হন। অভিযুক্তরা মত্ত অবস্থায় ছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে মার খেয়ে যায় মহিলাও। অভিযোগ রয়েছে, মহিলার শ্লীলতাহানিও করা হয়েছে।
স্থানীয় পুলিশকর্মীরা ওই সময় টহল দিচ্ছিলেন। তাঁরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই দুষ্কৃতীকে আটক করেন, কিন্তু অন্যরা পালিয়ে যায়। আহত দম্পতিকে রাতেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। তাঁদের অবস্থান আপাতত স্থিতিশীল।
কলকাতার অন্য ঘটনার সঙ্গে সাদৃশ্য
এছাড়া, শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটি নতুন ঘটনা ঘটেছে কলকাতার এন্টালিতে। সেখানেও বাড়ির সামনে শব্দবাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করায় এক তরুণকে মারধরের শিকার হতে হয়েছে। ইটের আঘাতে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায়ও পুলিশের তৎপরতায় দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সমাজের মধ্যে ভীতি ও প্রতিবাদ
লেকটাউনের ঘটনাগুলি প্রমাণ করে যে, শব্দবাজি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাড়ছে। এই ধরনের ঘটনা সমাজে ভীতি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। পুলিশের উপর হামলা ও মহিলার শ্লীলতাহানি যে কোনো সমাজের জন্য অত্যন্ত নিন্দনীয়, এবং এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পুলিশের পদক্ষেপ ও আগামী পরিকল্পনা
পুলিশ জানিয়েছে, তারা এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সচেষ্ট থাকবে এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা করছে। লেকটাউন এবং এর আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, শহরের যুবকদের মধ্যে এ ধরনের দুষ্কৃতী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রবণতা বাড়ছে, যা আশা জাগায়। তবে, পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের আরও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত যাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং দুষ্কৃতীরা কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হয়।
লেকটাউনের ঘটনা শুধুমাত্র একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং এটি আমাদের সমাজের বৃহত্তর সমস্যাগুলোর প্রতিফলন। তাই এর সমাধানের জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।


