Saturday, May 17, 2025

যুদ্ধ শুধু সীমান্তে নয়, দেশের ভিতরেও চলবে যুদ্ধ: ‘মক্ ড্রিল’ দেখাবে দিশা, দায়িত্ব দেশবাসীর

Share

‘মক্ ড্রিল’ দেখাবে দিশা, দায়িত্ব দেশবাসীর

যুদ্ধ মানেই শুধু সীমান্তে সেনা গুলির লড়াই নয়। শত্রু দেশকে ঠেকানোর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও আর এক যুদ্ধ শুরু হয়—সেই যুদ্ধের সৈনিক হন সাধারণ মানুষ। এই যুদ্ধের প্রাথমিক শিক্ষা দিতে এ বার দেশজুড়ে শুরু হয়েছে মক্ ড্রিল’ বা যুদ্ধকালীন মহড়া। অভিজ্ঞ প্রাক্তন সেনা কর্নেল সৌমিত্র রায়ের মতে, যুদ্ধ শুরু হলে প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেই নিতে হবে বড় দায়িত্ব।

সীমান্তে সেনা শত্রুর মোকাবিলায় প্রস্তুত। প্রয়োজনে তারা শত্রুপক্ষের ভূখণ্ডেও ঢুকে লড়াই করবে। কিন্তু শত্রু যদি যুদ্ধবিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে হামলা চালায়, তখন নাগরিকদের দ্রুত, সঠিক পদক্ষেপ নিতে জানতে হবে। ঠিক এই ধরনের পরিস্থিতির প্রস্তুতির জন্যই সারা দেশে এই মহড়া চলছে।

এই চিত্র প্রথম নয়। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ভারতীয় আকাশসীমায় পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানের হামলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এমনকি তার আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও কলকাতা ছিল একাধিক বিমানহানার সাক্ষী। সেই সময় বজবজ ও কলকাতায় জাপানি বোমা হামলার স্মৃতি এখনও অনেক প্রবীণের মনে রয়ে গিয়েছে।

মক্ ড্রিল শেখাবে কীভাবে বোমা পড়ার আশঙ্কায় ‘ব্ল্যাকআউট’ করতে হয়—অর্থাৎ ঘর ও বাইরের সমস্ত আলো নিভিয়ে দেওয়া, যাতে শত্রুপক্ষ বুঝতেই না পারে নিচে লোকালয় রয়েছে। শেখানো হবে কীভাবে ঘরের ভিতর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা—যেমন টেবিল বা খাটের নিচে—আশ্রয় নিতে হয়। এতে বাড়ি আংশিক ভেঙে পড়লেও প্রাণ বাঁচতে পারে।

বর্তমানে যুদ্ধের ভয় আরও জটিল। আগের দিনের মতো শুধু বোমা নয়, এখন দু’দেশের হাতেই ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে, আগুন লাগতে পারে, বহু মানুষ আহত হতে পারেন। তাই শেখানো হবে কীভাবে দ্রুত আগুন নেভাতে হয়, কীভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয়। স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসা শিবির তৈরি রাখার কথা ভাবতে হবে।

এইসব ব্যবস্থার জন্য শুধু প্রশাসনের উপর ভরসা করলে চলবে না। প্রয়োজন সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণ। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁদের ভূমিকা শুধু আহতদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং সামাজিক নিরাপত্তা বজায় রাখার দায়িত্বও নিতে হবে।

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অন্ধকার শহরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই মক্ ড্রিলের আর এক লক্ষ্য—জনগণকে সামাজিক পাহারাদার হিসেবে গড়ে তোলা। ব্ল্যাকআউটের সময় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নজরদারি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।

এক দিনের মহড়ায় সব শেখানো সম্ভব নয়, স্বীকার করেন কর্নেল রায়। তবে এই মহড়া পথ দেখাবে। হাতে ধরে না শিখিয়ে দিলেও, নাগরিক সমাজকে বুঝিয়ে দেবে—যুদ্ধ যদি হয়, প্রশাসনের পাশাপাশি তাঁরাও দায়ী। সঙ্ঘবদ্ধ, সচেতন নাগরিকরাই যুদ্ধকালীন ভারতকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারেন।

“এভাবে তো পাকিস্তানের সঙ্গেই করি!”—যমুনা-সিন্ধুর জল নিয়ে পাঞ্জাব-হরিয়ানার তীব্র দ্বন্দ্বে বিস্মিত হাই কোর্ট

Read more

Local News