Friday, November 7, 2025

মেট্রোতে হিন্দি বনাম বাংলা বিতর্ক: পশ্চিমবঙ্গের ভাষা বৈচিত্র্যে প্রশ্ন

Share

মেট্রোতে হিন্দি বনাম বাংলা বিতর্ক

কলকাতার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্লানেড স্টেশনে সম্প্রতি এক ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, এক হিন্দিভাষী তরুণী এক বাংলাভাষী তরুণীকে অপমান করছেন শুধুমাত্র বাংলা বলার কারণে। ঘটনাটি ১৮ নভেম্বর ঘটে এবং এর জেরে দুই তরুণী পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় স্টেশনে আটকে থাকেন।

ঘটনার বিবরণ

ভিডিওতে দেখা যায়, হিন্দিভাষী তরুণী বলছেন, “এটা বাংলাদেশ নয়, এটা ভারত! ভারতের ভাষা হিন্দি। ভারতে থাকলে হিন্দি জানতেই হবে। তুমি কি বাংলাদেশি?” উল্টো দিকে বাংলাভাষী তরুণী জবাব দেন, “আমি বাঙালি, আমি ভারতীয়। বাংলা আমার মাতৃভাষা।”

এই উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার মাঝে হিন্দিভাষী তরুণী হুমকি দেন, “আই উইল স্যু হার” (আমি মামলা করব)। বাংলাভাষী তরুণী, শক্তিরূপা সাধুখাঁ, এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছিলেন। তবে অভিযোগ, তাঁকে জোর করে সেই ভিডিও মুছে ফেলার পাশাপাশি মুচলেকা লিখতে বাধ্য করা হয় যে তিনি আর কোনও পদক্ষেপ নেবেন না।

অভিযোগের ভিত্তি

শক্তিরূপা জানান, হিন্দিভাষী তরুণীর ভাষা এবং আচরণ শুধু তাঁকেই অপমান করেনি, বরং দেশের ভাষা বৈচিত্র্যের ধারণাকেও আঘাত করেছে। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে বাংলা বলার জন্য আমাকে বাংলাদেশি বলা হল, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”

আরপিএফ (রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স) জানিয়েছে, হিন্দিভাষী তরুণী মৌখিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে মেট্রো কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, কেন তাঁরা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেন।

ভাষা এবং সংবিধান

ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিলে ২২টি ভাষা স্বীকৃত। এর মধ্যে হিন্দি এবং বাংলা উভয়েরই সমান মর্যাদা রয়েছে। প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী শিবাজীপ্রতিম বসু বলেন, “ভারতের কোনও রাষ্ট্রভাষা নেই। হিন্দি এবং ইংরেজি সরকারি ভাষা। তবে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলোতে বাংলার মতো আঞ্চলিক ভাষারও যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়।”

তিনি আরও বলেন, “ভাষার বৈচিত্র্যের উপর ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু হিন্দি চাপানোর এই প্রবণতা সংহতির ক্ষতি করছে।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। অনেকেই বলছেন, “মেট্রো চত্বরে ‘আমার মেট্রো’ বলে বাংলায় প্রচার চলে। তাহলে বাংলা বলার কারণে একজনকে হেনস্থা হতে হবে কেন?” মেট্রো কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

অন্যদিকে, বাংলাভাষী তরুণীর বক্তব্য, “আমার মাতৃভাষা বাংলার জন্য আমি গর্বিত। জাতীয় সংগীত বাংলায় লেখা হয়েছে, যা ভারতীয় সংহতির প্রতীক।”

উপসংহার

এই ঘটনা শুধুমাত্র দুই ব্যক্তির বিবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি দেশের ভাষা বৈচিত্র্য এবং সংস্কৃতির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির একটি প্রতিফলন। ভাষার নামে বৈষম্য এবং ঔদ্ধত্য ভারতের সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে। এ ধরনের আচরণ বন্ধ করতে হলে প্রয়োজন ভাষার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সহনশীলতা।

ভাষার বৈচিত্র্যই ভারতের গর্ব। তাই বাংলায় কথা বলার জন্য কোনও ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা বা অপমান করা সংবিধানের আদর্শের পরিপন্থী। সমাজের দায়িত্ব এমন ঘটনার নিন্দা করা এবং ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।

Read more

Local News