Monday, November 10, 2025

মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের বার্তার পরেও গুলি ও বোমাবাজি! অশান্তি নিয়ে নতুন বছর শুরু করল মণিপুর

Share

মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের বার্তার পরেও গুলি ও বোমাবাজি!

নতুন বছরেও অশান্তির ছায়া থেকে মুক্তি পেল না মণিপুর। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে মঙ্গলবার রাতেও জঙ্গিদের তাণ্ডবে আতঙ্কিত হয়ে উঠল সাধারণ মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ যেখানে বর্ষবরণের দিনে রাজ্যের জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে শান্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন, সেখানেই রাতের অন্ধকারে গুলি ও বোমাবাজির শব্দে কেঁপে উঠল পশ্চিম ইম্ফলের কদংবন্দ।

মঙ্গলবার রাতে পাহাড়ি অঞ্চলে শুরু হওয়া এই হামলায় কোনো প্রাণহানির খবর না মিললেও, গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক চরমে পৌঁছায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ের উঁচু স্থান থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও বোমা ব্যবহার করে গ্রাম লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায় একদল জঙ্গি। আকস্মিক এই আক্রমণে গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

পুলিশ জানিয়েছে, রাত ১টা নাগাদ কদংবন্দে এই হামলা শুরু হয়। গ্রামে মোতায়েন থাকা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী তৎক্ষণাৎ পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাদের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা ও শান্তির বার্তা

এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহ ২০২৩ সালের মে মাস থেকে চলতে থাকা অশান্তির জন্য রাজ্যবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি বলেন, “২০২৩ সাল আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক ছিল। গত ৩ মে থেকে আজ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে, তার জন্য আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। বহু মানুষ তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, অনেকে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে গত তিন-চার মাসের পরিস্থিতি দেখে আমার বিশ্বাস, ২০২৫ সালে মণিপুরে শান্তি ফিরবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত কয়েক মাসে রাজ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। পশ্চিম ইম্ফল, পূর্ব ইম্ফল, কংপোকপি ও চুরাচাঁদপুর জেলা মিলিয়ে প্রায় ২,০০০ বাস্তুচ্যুত পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ছ’হাজারেরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ।

বাস্তবের চিত্র: অশান্তি অব্যাহত

মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কদংবন্দের ঘটনায় অশান্তির বার্তা আরও জোরালো হয়। এর আগেই মঙ্গলবার কংপোকপি জেলার সাইকুল এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের কারণে সেখানে কার্ফু জারি করতে হয়।

এই দুই জেলার মধ্যে, বিশেষত কংপোকপি এবং পশ্চিম ইম্ফলেই অশান্তি বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলে জঙ্গি কার্যকলাপ এবং গ্রাম লক্ষ্য করে হামলা করার ঘটনা প্রায়শই শোনা যায়। প্রশাসন জানিয়েছে, এই এলাকাগুলোতে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।

নতুন বছরে শান্তি ফিরবে কি?

মুখ্যমন্ত্রীর আশার বাণী সত্ত্বেও মণিপুরের পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া জাতিগত সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হলেও অশান্তি প্রশমিত হয়নি।

মুখ্যমন্ত্রীর মতে, গত কয়েক মাসে রাজ্য সরকার অশান্তি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ মনে করছেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে এখনও অনেক সময় লাগবে। নতুন বছরের শুরুতে এই হামলা সেই ধারণা আরও দৃঢ় করল।

মণিপুরবাসীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান ছিল, “পুরনো ক্ষত ভুলে গিয়ে নতুন বছরকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করুন।” তবে, বাস্তবের প্রেক্ষিতে এই বার্তা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

অতীতের অশান্তি ভুলে মণিপুরের মানুষ কি নতুন বছরে শান্তি ও সৌহার্দ্যের পথ বেছে নিতে পারবেন? নাকি অশান্তির এই ছায়া আরও দীর্ঘায়িত হবে? রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই প্রশ্নের উত্তরেই।

Read more

Local News