মনমোহন সিংহকে ভারতরত্ন
সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ভারতরত্ন সম্মান দেওয়ার দাবি তুলেছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল আম আদমি পার্টি (আপ)। যদিও কংগ্রেস এখনও এ বিষয়ে নীরব রয়েছে। আপের রাজ্যসভা সদস্য সঞ্জয় সিংহ কেন্দ্রকে এই বিষয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। সঞ্জয়ের মতে, “মনমোহন সিংহের সমস্ত যোগ্যতা রয়েছে ভারতরত্ন পাওয়ার।”
আপের দাবি এবং শিখ সংগঠনের সমর্থন
দিল্লির রাজনীতিতে আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চললেও, মনমোহনের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আপ প্রথম পদক্ষেপ নেয়। সঞ্জয় সিংহের মতোই একাধিক শিখ সংগঠন মনমোহন সিংহকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তবে কংগ্রেস এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
আজ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে মনমোহন সিংহের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। তবে সেখানে ভারতরত্ন সম্মানের বিষয়ে কোনো উল্লেখ ছিল না। শোক প্রস্তাবে বলা হয়, মনমোহন সিংহের আর্থিক সংস্কার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দৃষ্টিভঙ্গি দলকে ভবিষ্যতে পথ দেখাবে।
বিজেপির সম্ভাব্য পদক্ষেপ
প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে ভারতরত্ন সম্মান ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরে কংগ্রেসের আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও-কে ভারতরত্ন দিয়েছে মোদী সরকার। এর আগে ২০১৯ সালে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও এই সম্মান পেয়েছিলেন। বিজেপি শাসক শিবিরের দাবি ছিল, কংগ্রেস গান্ধী পরিবারের বাইরে নেতাদের সম্মান দিতে পারে না।
কংগ্রেসের একাংশের ধারণা, নরসিংহ রাও এবং প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো মনমোহন সিংহকেও ভারতরত্ন দেওয়ার মাধ্যমে কংগ্রেসের নেতাদের প্রতি বিজেপি তাদের স্বীকৃতি প্রদর্শন করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা ও অতীতের বিতর্ক
মনমোহন সিংহের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ তাঁর বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক ভিডিও বার্তায় মোদী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে মনমোহন সিংহের অবদান চিরস্মরণীয়। সাধারণ পরিবার থেকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছানো মনমোহনের জীবন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আদর্শ। তাঁর সততা ও সরলতা বিশেষভাবে স্মরণীয়।”
তবে, অতীতে মনমোহন সিংহকে নিয়ে মোদীর বিতর্কিত মন্তব্যের কথাও অনেকে ভুলে যাননি। ২০১৭ সালে রাজ্যসভার এক বিতর্কে মোদী বলেছিলেন, “শৌচাগারে রেন কোট পরে স্নান করার কৌশল একমাত্র মনমোহন সিংহই জানেন।” এই মন্তব্য মনমোহনের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, যা ইউপিএ সরকারের দুর্নীতির সময় আলোচিত হয়েছিল।
রাজনৈতিক চিত্র এবং সম্ভাব্য সম্মাননা
মনমোহন সিংহকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি কংগ্রেস এবং আপের মধ্যে একটি অদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যদিও কংগ্রেস সরাসরি এই দাবি তোলেনি, তবে আপের পদক্ষেপ এবং শিখ সংগঠনের সমর্থন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে মনমোহনের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও, বিজেপি এই সম্মান দেওয়ার মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইতে পারে। তবে, কংগ্রেস এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই দেখার বিষয়।
উপসংহার
মনমোহন সিংহের মতো একজন অর্থনীতিবিদ এবং প্রধানমন্ত্রী, যাঁর নেতৃত্বে ভারত উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সংস্কার দেখেছে, তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি যথাযথ। তবে, রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই সম্মানের ঘোষণা এবং গ্রহণে কী প্রভাব ফেলে, তা সময়ই বলবে।


