মনকে শান্ত রাখার প্রাচীন কৌশল!
আজকের ব্যস্ত ও উদ্বেগে ভরা জীবনে আমরা সকলেই একটু মানসিক শান্তির খোঁজে থাকি। উদ্বেগ, অবসাদ বা মানসিক চাপ যত বাড়ছে, ততই প্রয়োজন হয়ে উঠছে এমন কিছু অভ্যাস যা শুধু শরীর নয়, মনকেও সুস্থ রাখবে। ঠিক সেই জায়গায় এসে দাঁড়ায় বদ্ধ পদ্মাসনের মতো একটি যোগাসন। এই প্রাচীন যোগাভ্যাস শুধু একটি আসন নয়, বরং এটি একটি অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধি ও শারীরিক ভারসাম্যের চাবিকাঠি। নিয়মিত এই আসনের অনুশীলন মানসিক স্থিরতা বাড়িয়ে তোলে, মনোযোগে আনে গভীরতা, এবং শরীরের অস্থিসন্ধি ও পেশিকে করে তোলে অনেক বেশি নমনীয় ও দৃঢ়।
বদ্ধ পদ্মাসনকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘বাউন্ড লোটাস পোজ়’। এটি পদ্মাসনে বসেই করা হয়, অর্থাৎ দুই পা বিপরীত দিক থেকে জড়িয়ে নিয়ে মাটিতে বসে পড়া—এভাবেই শুরু হয় এই আসনের প্রথম ধাপ। এরপর দুই হাত পেছনের দিকে নিয়ে গিয়ে বাঁ হাতে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল এবং ডান হাতে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে রাখতে হয়। এই ভঙ্গিমায় কয়েক মুহূর্ত স্থির হয়ে থেকে আবার আগের অবস্থানে ফিরতে হয়। অভিজ্ঞরা বলেন, নিয়মিত চর্চা করলে ধীরে ধীরে এই আসনের স্থায়িত্ব বাড়ানো যায়, যা শরীর ও মনের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
ফিটনেস বিশেষজ্ঞদের মতে, বদ্ধ পদ্মাসন সারা শরীরের জয়েন্ট ও মাংসপেশির জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি কোমর, হাঁটু, গোড়ালি এবং মেরুদণ্ডের শক্তি ও নমনীয়তা বাড়ায়। সেই সঙ্গে হজমক্ষমতা উন্নত করে এবং অম্বলের সমস্যা কমায়। দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা মোবাইলের পর্দায় চোখ রাখার ফলে মনোযোগে যে বিচ্যুতি ঘটে, বদ্ধ পদ্মাসন সেই মনঃসংযোগ ফিরে আনতেও কার্যকর। এটি অনুশীলনে মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ অনেকটাই হ্রাস পায় এবং ধ্যানের অভ্যাস সহজ হয়ে ওঠে।
তবে কিছু সাবধানতাও মেনে চলা জরুরি। যাঁদের হাঁটু, কোমর বা পিঠে পুরনো আঘাত রয়েছে, তাঁদের এই আসনটি না করাই শ্রেয়। আবার যোগাভ্যাসে একেবারে নতুন হলে, প্রশিক্ষকের নির্দেশ ছাড়া এই আসন অভ্যেসে যাওয়া ঠিক নয়। কারণ ভুলভাবে করলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
আসলে, শরীর ও মনের মিলিত উন্নতি তখনই সম্ভব যখন আমরা আমাদের জীবনযাত্রায় যোগাসনের মতো সচেতন অভ্যাসকে স্থান দিই। বদ্ধ পদ্মাসন সেই পথেই এক মূল্যবান সংযোজন। ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে ফিরিয়ে আনার এক নিঃশব্দ অথচ শক্তিশালী কৌশল এটি—যা শরীরকে শক্ত ও মনের ভার কমিয়ে আপনাকে এনে দিতে পারে এক গভীর প্রশান্তি।
বাড়ির আতঙ্ক কাটিয়ে জীবন বদলের পথে করিনা: চুয়াল্লিশে পা দিয়েই নিলেন এক দৃঢ় সিদ্ধান্ত