বৈভব সূর্যবংশী !
ক্রিকেটে এখন আর রূপকথার জায়গা নেই। এ খেলা আজকের দিনে নিঃসঙ্গ, নির্মম, নির্দয়। এক ম্যাচে নায়ক, পরের ম্যাচেই নীরব দর্শক—ক্রিকেটের এই রূপই দেখে ফেলল মাত্র ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে আইপিএল ২০২৬-এ মাঠে নামতেই সে রূপকথার মতো ইনিংস উপহার দিয়েছিল। গুজরাত টাইটানসের বিরুদ্ধে মাত্র ৩৫ বলে শতরান! আন্তর্জাতিক স্তরের বোলারদের বিরুদ্ধে পরিণত ব্যাটসম্যানদের মতো ছক্কা হাঁকানো!
বিহারের সমস্তিপুর জেলার মোতিপুর গ্রামের এই কিশোরের যাত্রাপথ কিন্তু সহজ ছিল না। তার বাবা সঞ্জীব নিজে ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন, পারেননি। স্বপ্নটা ছেলের হাতে তুলে দিয়ে চার বছর বয়স থেকেই তাকে তৈরি করতে শুরু করেন। জমি বিক্রি করে ভর্তি করান পটনার এক অ্যাকাডেমিতে, যেখানে যাওয়া-আসা মানে প্রতিদিন ২০০ কিমি পথ পাড়ি দেওয়া। এই যন্ত্রণার চর্চার ফলেই হয়তো মাত্র ১২ বছর বয়সে বৈভব প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নাম লেখায়, তারপর টি২০-তেও তার ঝলক।
আর এই আইপিএলে? প্রথম ম্যাচেই শার্দূল ঠাকুরের প্রথম বলেই ছক্কা! শেন ওয়াটসন বলে ফেলেন, ‘‘এই শট মারতে আমার ৩৫ বছর লেগেছে!’’ রোহিত শর্মার ছোট্ট মন্তব্য, ‘‘ক্লাস।’’ যুবরাজ বলেন, ‘‘অবিশ্বাস্য!’’ এমন প্রশংসায় ভাসছিল গোটা ক্রিকেটবিশ্ব।
কিন্তু পরের ম্যাচেই সব বদলে গেল। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে দু’ বলেই শূন্য! দীপক চাহারের গুডলেংথ ডেলিভারিতে একেবারে সহজ ক্যাচ। চারদিক থমকে যায়। ভরা গ্যালারিও চুপ।
এই হল আজকের ক্রিকেট। একদিকে যেমন রাহুল দ্রাবিড়ের মতো মানুষ চেয়ারে বসা অবস্থায় উঠে দাঁড়িয়ে যান বৈভবের ইনিংসে, তেমনই আবার পরের ম্যাচে সবার মুখে একটাই প্রশ্ন—এই ছেলেটা কি ‘ওয়ান ম্যাচ ওয়ান্ডার’?
সুনীল গাভাসকরের মতামত, ‘‘আরও একটা আইপিএল যাক, তারপর দেখা যাবে ও ভারতীয় দলে খেলার যোগ্য কি না।’’
এই সময়ের ক্রিকেটে তাই ভালোবাসা যেমন আছে, তেমনি আছে অবিশ্বাস, সন্দেহ আর খারিজ করার স্পর্ধা। বৈভব হয়তো এখনই শিখে ফেলেছে—এই খেলা দু’হাতে যেমন দেয়, তেমনি এক ঝটকায় সব নিয়ে নেয়। যুবরাজের সেই বিজ্ঞাপনেই তো ছিল, “যতক্ষণ ব্যাট চলছে, ততক্ষণ ঠাট আছে।”
ক্রিকেটের কাছে নতজানু থাকতে হয়। বৈভব এই শিক্ষা ১৪ বছর বয়সেই পেয়ে গেছে।
এটাই ক্রিকেট, এটাই জীবন।
কাশ্মীরে টানা ৮ দিন সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন, পাঁচ জায়গায় গুলি পাক সেনার! পাল্টা জবাব দিল ভারতীয় সেনাও