Sunday, July 13, 2025

বিরাটের বিদায়ের পর অনুষ্কার আবেগ, ব্যথিত মাইকেল ভন ও ক্রিকেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা

Share

বিরাটের বিদায়ের পর অনুষ্কার আবেগ!

মাঠে কিংবদন্তি মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন বিরাট কোহলি। তার আগ্রাসী ব্যাটিং, আবেগপূর্ণ খেলা, অসংখ্য স্মরণীয় জার্সি তিনি ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের দান করেছেন। কিন্তু এই আলো-আনন্দের আড়ালে ছিল একগুচ্ছ কষ্ট, যা মাত্র তার স্ত্রী অনুষ্কা শর্মাই দেখতে পেয়েছেন।

বিরাট যখন সোমবার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করলেন, তখন শুধু সমর্থকই নয়, পরিবার এবং বন্ধুদের মধ্যেও সেই খবর ছড়িয়ে পড়ল গভীর মর্মান্তিকতা নিয়ে। অবসরের দিনই অনুষকা ইনস্টাগ্রামে একটি আবেগঘন পোস্ট করেছিলেন, যেখানে তিনি লিখেছিলেন, “সবাই তোমার রেকর্ড এবং মাইলফলকের কথা বলবে, কিন্তু আমি মনে রাখব তোমার চোখের জল। যা তুমি কখনও কাউকে দেখাওনি। সেই লড়াই, যার সাক্ষী একমাত্র আমি।”

এই পোস্টের আড়ালে লুকিয়ে ছিল বিরাটের একান্ত মনের কথাগুলো, যেগুলো তিনি অন্য কাউকে ভাগ করেননি। সেই চোখের জলের একমাত্র সাক্ষী অনুষকা। কিন্তু তা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অনুষকা আবার একটি পোস্ট করেন, যা আবারো ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে তোলপাড় সৃষ্টি করে।

এই পোস্টটি ছিল স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান বরুণ গ্রোভারের একটি বক্তব্যের জবাব, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “যারা সত্যিকার অর্থে টেস্ট ক্রিকেটে সফল, তাদের কাছে থাকে এমন একটা গল্প—যা সময়ের সঙ্গে গভীরতর হয়, যা আবহাওয়া বা পিচের অবস্থা দেখে বদলায় না, দেশ-বিদেশের পার্থক্য ভুলিয়ে দেয়।” অনুষকা তাঁর পোস্টে বিরাটের প্রতি সেই ভালোবাসা আর সম্মান ব্যক্ত করেন।

ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভনও বিরাটের অবসরের খবর শুনে ব্যথিত। তিনি লিখেছেন, “বিরাটের টেস্ট থেকে অবসরের সিদ্ধান্তে আমি গভীরভাবে হতাশ। ৩০ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এমন হয় খুব কম। ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মে আর কখনো সাদা জার্সিতে বিরাটকে দেখতে পাব না, এ ভাবনায় কষ্ট হয়।” ভন আরও বলেন, “বিরাট এক দশক ধরে ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের প্রাণশক্তি ছিলেন। তাঁর আবেগ ও দক্ষতা টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন প্রাণ দিয়েছিল। তাঁর অবসর টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বড় ধাক্কা।”

ক্রিকেট বিশ্লেষক ও গীতিকার জাভেদ আখতারও এই সিদ্ধান্তকে ‘অপরিণত’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “আমি বিশ্বাস করি বিরাটের মধ‌্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বাকি ছিল। একজন ভক্ত হিসেবে এই সিদ্ধান্ত আমাকে খুব হতাশ করেছে।”

অপরদিকে, ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন উইকেটকিপার সৈয়দ কিরমানি মনে করেন অতিরিক্ত চাপ আর ধকলের কারণে হয়তো বিরাট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “বিরাট কখনোই রেকর্ডের চিন্তায় খেলেননি। ওর অবসরের সময় ব্যক্তিগত বিষয়, তাই এ নিয়ে বেশি প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না।” তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, “বিরাট না থাকলে হয়তো এক প্রজন্ম টেস্ট ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যাবে।”

বিরাটের শেষ টেস্ট সিরিজ ছিল বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি, যেখানে পাঁচ ম্যাচে মাত্র ১৯০ রান করেছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া সফরের পর দিল্লির হয়ে রঞ্জি ট্রফিতেও নেমেছিলেন, কিন্তু সেখানেও কাঙ্ক্ষিত ফর্ম ফিরে পাননি। তবুও কিরমানি বিশ্বাস করেন, তাঁর মধ্যেই এখনও ক্রিকেটের আগুন জ্বলছিল।

অন্যদিকে, ভক্তরা বিরাটকে সম্মান জানাতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী শনিবার আইপিএল ম্যাচে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচে সাদা জার্সি পরে স্টেডিয়াম ভরে ‘বিরাটকে সম্মান’ জানানো হবে। কারণ, ১৪ বছর দেশের জন্য লাল বলের ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করার পর তিনি গত সোমবার টেস্ট থেকে বিদায় নিয়েছেন।

বিরাট কোহলির এই বিদায় যেন এক যুগের শেষ, কিন্তু ক্রিকেট প্রেমীদের মনে তার স্মৃতি চিরদিন বেঁচে থাকবে। মাঠের বাইরে থাকা স্ত্রী অনুষ্কার আবেগ এবং ক্রিকেট জগতের শ্রদ্ধাবাণী মিলিয়ে গড়া এই অধ্যায় অনেকের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছে।

পাকিস্তানি ভাইবোনদের উদ্দেশে রণবীরের পোস্ট কেন মুছলেন? বিতর্কের মধ্যে সাফাই দিলেন অভিনেতা

Read more

Local News