বাঘিনির নাগাল মেলে না
ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে এখনো লুকিয়ে রয়েছে বাঘিনি জ়িনত। ওড়িশার সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভ থেকে ঝাড়খণ্ড হয়ে গত শুক্রবার ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে ঢুকে পড়ে এই তিন বছরের বাঘিনি। বন দফতরের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে এখনও বাগে আনা সম্ভব হয়নি। বনকর্মীরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু জ়িনত যেন ফাঁকি দেওয়ার খেলায় মগ্ন।
কীভাবে ঝাড়গ্রামে এল জ়িনত?
গত ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে জ়িনতকে সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভে আনা হয়। কয়েকদিন পর্যবেক্ষণের পরে ২৪ নভেম্বর তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে ঝাড়খণ্ড হয়ে ঝাড়গ্রামে ঢুকে পড়ে জ়িনত। জামশেদপুরের চাকুলিয়া রেঞ্জ পেরিয়ে সে এখন ঝাড়গ্রামের কাটুচুয়া ও কাঁকড়াঝোড়ের জঙ্গলে অবস্থান করছে।
বন দফতরের প্রচেষ্টা
জ়িনতের গলায় থাকা রেডিয়ো কলারের মাধ্যমে তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ড্রোনের সাহায্যে তার অবস্থান খোঁজা হচ্ছে এবং বিভিন্ন জায়গায় খাঁচা বসিয়ে টোপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও ফাঁদেই পা দেয়নি জ়িনত।
বন দফতরের ডিএফও উমর ইমাম জানিয়েছেন, জ়িনতকে ধরতে সুন্দরবন থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল আনা হয়েছে। ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার বন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা হচ্ছে।
কীভাবে নাগালের বাইরে জ়িনত?
বাঘ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুন্ডুর মতে, ঝাড়গ্রামের জঙ্গল এলাকা মূলত শ্যাডো জ়োন, যেখানে রেডিয়ো সিগন্যাল ঠিকমতো পাওয়া যায় না। এই কারণেও জ়িনতের সঠিক অবস্থান জানতে দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া বনকর্মীদের যতক্ষণে তার অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে, ততক্ষণে জায়গা বদলে ফেলছে বাঘিনি।
বন দফতরের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হল, জ়িনত অত্যন্ত সতর্ক। খাঁচার টোপ বা অন্য কোনও ফাঁদ সে সহজেই এড়িয়ে যাচ্ছে। তাকে ট্র্যাঙ্কুলাইজ করার জন্য সরাসরি দেখা পাওয়া প্রয়োজন, যা এখনও সম্ভব হয়নি।
ঝাড়গ্রামের মানুষের সতর্কতা
ঝাড়গ্রামে এখন পর্যটনের ভরা মরসুম। জ়িনত যেখানে অবস্থান করছে, তার আশপাশে সাতটি হোমস্টে রয়েছে। বন দফতর গ্রামবাসীদের সন্ধ্যার পর জঙ্গলের ধারে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। প্রয়োজন পড়লে বন দফতরের গাড়ির সাহায্য নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গ্রামবাসীদের বাঘিনি সম্পর্কিত কোনও খবর পেলেই বন দফতরকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, বাঘিনিকে ঘিরে কোনও গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।
পরিস্থিতি কতটা জটিল?
জ়িনতের উপস্থিতি যেমন চ্যালেঞ্জের, তেমনই উদ্বেগের। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন দফতর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো হচ্ছে, মাইকিং করে সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে এবং গ্রামবাসীদের সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
আশার আলো
বাঘিনির গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য বন দফতরের অভিজ্ঞ কর্মী এবং প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। বন বিশেষজ্ঞদের আশা, খুব শিগগিরই জ়িনতকে কাবু করে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
জ়িনতকে কেন্দ্র করে ঝাড়গ্রামের জঙ্গল এখন শুধু বন্যপ্রাণী রক্ষার নয়, মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থানের প্রতীক হয়ে উঠেছে। বনকর্মীদের প্রতিটি প্রচেষ্টা আরও একবার প্রমাণ করছে, প্রকৃতি রক্ষার চ্যালেঞ্জ কতটা জটিল, কিন্তু তা সফল করতে ইচ্ছাশক্তির অভাব নেই।


