Monday, November 10, 2025

প্রসূতির স্ট্রেচার তুলতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল লিফ্‌ট! সন্তান জন্মের পর হাসপাতালে মৃত্যু মহিলার

Share

প্রসূতির স্ট্রেচার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল লিফ্‌ট

উত্তরপ্রদেশের মিরাটের ক্যাপিটাল হাসপাতালে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একটি সদ্য প্রসূতি মা প্রাণ হারিয়েছেন। ঘটনার সূত্রপাত তখনই, যখন সদ্য সন্তান জন্ম দেওয়া এক মহিলা স্ট্রেচারে শুয়ে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে যেতে যাচ্ছিলেন। এই সময়েই লিফ্‌টটি আচমকা ছিঁড়ে নিচে পড়ে যায়। এতে মহিলার মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে, এবং পরবর্তীতে তার মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনা শুধু একটি ভীতিকর অভিজ্ঞতা নয়, বরং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে মিরাটের শাস্ত্রীনগর এলাকার ক্যাপিটাল হাসপাতালে, যেখানে বৃহস্পতিবার রাতে এক মহিলা সিজার পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান এবং মা উভয়েই সুস্থ ছিলেন এবং তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করার জন্য স্ট্রেচারে তোলা হচ্ছিল। কিন্তু, ওই মুহূর্তেই ঘটে বিপত্তি। নার্সেরা স্ট্রেচারটি লিফ্‌টে তোলার চেষ্টা করছিলেন, এবং লিফ্‌টে আরও কয়েকজন মানুষ ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, লিফ্‌টটি আচমকাই ভেঙে পড়ে। এর ফলে লিফ্‌টের মধ্যে থাকা সবাই আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করতে শুরু করেন। কিছু লোক নীচে থেকে দরজা খুলে ভিতরে আটকে থাকা লোকজনকে বের করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। কিছুক্ষণ পর, উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং লিফ্‌ট থেকে আটকে থাকা সবাইকে উদ্ধার করেন। তবে, সবচেয়ে গুরুতর ক্ষতিটি হয় প্রসূতি মহিলার। লিফ্‌টের নিচে পড়ে তার মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে, এবং তাকে দ্রুত নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহিলার মৃত্যু হয়।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সদ্যজাত শিশুটিকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়, তবে তার জীবন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শিশুটির ভবিষ্যত সম্পর্কে এখনও কিছু নিশ্চিত করা যায়নি।

ঘটনার পর, মৃতের পরিবার হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা দাবি করেন যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে হাসপাতালের ভেতরে ভাঙচুরও করা হয়। আতঙ্কিত চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মচারীরা কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ এসে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে।

ঘটনার পর মিরাটের মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে পুরো ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে আরও ১৫ জন রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছে এবং হাসপাতালটি আপাতত সিল করে দেওয়া হয়েছে। মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালের চিকিৎসক, সুপার এবং অন্যান্য কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ একটি বিশেষ দল গঠন করে তদন্ত শুরু করেছে, যা একাধিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

এই দুর্ঘটনা হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং লিফ্‌টের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব আরও একবার তুলে ধরেছে। একদিকে, মায়ের মৃত্যুতে সদ্যজাত সন্তানের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, যা জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশ্বাসের সংকট সৃষ্টি করেছে। নিহত মহিলার পরিবার আশা করছে যে, পুলিশের তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি হবে এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Read more

Local News