পোষ্যের শরীরে পরজীবী সংক্রমণ
বর্ষা এবং শীতের সময়, বিশেষ করে কুকুরদের শরীরে এক ধরনের পরজীবী সংক্রমণ দেখা দেয়, যা ‘টিক’ বা ‘এঁটুলি’ নামে পরিচিত। এই পরজীবী পোকাগুলি কুকুরের শরীরে বাসা বাঁধে এবং ত্বকে মারাত্মক সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। তাদের কামড়ের ফলে চুলকানি, র্যাশ, এবং ত্বকে ঘা পর্যন্ত হতে পারে, যা কুকুরের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তাই, এই ধরনের সংক্রমণ থেকে পোষ্যকে সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কীভাবে ছড়ায় টিক বা এঁটুলি পরজীবী?
পোষ্যের শরীরে টিক বা এঁটুলি পরজীবীর সংক্রমণ সাধারণত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে। সঠিক যত্নের অভাব, স্নান না করানো, অথবা পুষ্টির ঘাটতি থাকার কারণে এই পরজীবী পোকাগুলি বৃদ্ধি পায়। পশু চিকিৎসক সবুজ রায়ের মতে, কুকুরের লোমের মধ্যে এই পরজীবী পোকাগুলি এমনভাবে লুকিয়ে থাকে যে সহজেই এগুলি চোখে পড়তে পারে না। তবে, সাধারণত কানের আশপাশে বা কানের লতির মধ্যে এরা জন্মায়, তারপর সেখান থেকে চোখ, ঠোঁট ও গালের আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
অন্য প্রাণীদের শরীর থেকেও পরজীবী সংক্রমণ হতে পারে। যেমন, কুকুরের গলায় কলার পরিয়ে রাখলে, সেখানে পরজীবী জন্মাতে পারে। পোষ্যরা যখন মাটিতে বসে, তখন মাটি থেকে পরজীবী তাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত বংশবিস্তার করার ক্ষমতা থাকার কারণে, একবার এরা শরীরে প্রবেশ করলে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
লক্ষণ এবং ক্ষতি
টিক বা এঁটুলি সংক্রমণের ফলে কুকুরের লোম পড়তে শুরু করে এবং ত্বকে র্যাশ, ঘা দেখা দেয়। পোকাগুলি কুকুরের শরীর থেকে রক্ত খায়, যার ফলে ত্বকে প্রদাহ, চুলকানি, এবং অ্যালার্জি তৈরি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, কুকুরের শরীরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা সৃষ্টি হয় এবং তার ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে। কখনো কখনো, এই সংক্রমণ থেকে জ্বরও হতে পারে, যা কুকুরের জন্য খুবই বিপজ্জনক।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন এবং যত্ন নেবেন?
- বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার পর: কুকুরকে বাইরে ঘুরানোর পর, তার থাবা এবং গায়ের লোম ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ধুলোময়লা লেগে থাকলে, সেগুলি পরজীবী সংক্রমণের কারণ হতে পারে। কুকুরের গায়ে ময়লা জমতে না দিয়ে নিয়মিত স্নান করান।
- অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার: অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার ত্বকের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করতে পারে। এর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে। তবে সরাসরি ভিনিগার ব্যবহার না করে, পানি দিয়ে মিশিয়ে স্নান করাতে পারেন।
- প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার: পোষ্যের ত্বকে র্যাশ বা ঘা হলে, সেখানে অলিভ তেল লাগাতে পারেন। তবে খুব অল্প পরিমাণে তেল নিয়ে মালিশ করুন। এতে ত্বকের সংক্রমণ কমবে।
- নখ কাটানো এবং কান পরিষ্কার রাখা: কুকুরের নখ সপ্তাহে একবার কাটুন এবং কানের আশপাশ ভালোভাবে পরিষ্কার রাখুন। পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আপনি কানের জন্য বিশেষ পরিষ্কারের ওষুধও ব্যবহার করতে পারেন।
- কলার পরিহার করা: কুকুরের গলায় কলার পরিয়ে রাখা উচিত নয়, কারণ এখানে পরজীবী জন্মাতে পারে। সবসময় কলার না পরিয়ে রাখলে, পরজীবী সংক্রমণ কম হতে পারে।
- পোষ্যের লোম ব্রাশ করা: কুকুরের লোম নিয়মিত ব্রাশ করুন। বিশেষভাবে সেই স্থানে বেশি নজর দিন যেখানে পরজীবীরা সাধারণত থাকতে পছন্দ করে। স্নান বা ব্রাশ করার সময় এই অংশগুলোতে বেশি মনোযোগ দিন।
- পুষ্টির অভাব দূর করা: পোষ্যের শরীরে সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে, নিয়মিত খাবারে পরিবর্তন আনুন। দই-ভাত বা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার কুকুরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
শেষ কথা:
পোষ্যদের শরীরে পরজীবী সংক্রমণ খুবই সাধারণ, তবে সতর্কতা অবলম্বন করে সহজেই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সঠিক যত্ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, এবং পুষ্টির মাধ্যমে পোষ্যকে এই ধরনের পরজীবী সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়। ত্বকে কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
নাম পিঠে, দেখতে কেকের মতো! বাংলাদেশের মিষ্টি পদের নাম বিবিখানা, কীভাবে বানাতে হয়?


