পুর অনুমোদন দোতলার
ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডে অবস্থিত এক হেলে পড়া বহুতল ভবন নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, ভবনটি পাঁচতলা। কিন্তু ছাদে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ছাদের একাংশে বেআইনিভাবে আরেকটি তলা যোগ করা হয়েছে। ফলে আসল উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ছ’তলা!
বিধি ভেঙে নির্মাণ
কলকাতা পুরসভার নথি অনুযায়ী, বাড়িটির জন্য গ্যারাজসহ দু’টি তলার (জি প্লাস টু) অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণ বিধি লঙ্ঘন করে বাড়িটিকে ছ’তলায় রূপান্তর করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ছাদের একাংশে আলাদা একটি ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছে, যা সম্প্রতি ঝকঝকে সংস্কার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ফ্ল্যাটটি এখনো বিক্রি হয়নি।
এই অঞ্চলে বেআইনি নির্মাণের ঘটনা নতুন কিছু নয়। স্থানীয়দের প্রশ্ন, মাত্র দুই কাঠা জমির উপর কীভাবে ছ’তলার অনুমোদন দেওয়া হলো? পাশের একটি নির্মীয়মাণ ছ’তলা ভবনের জমি প্রায় তিন কাঠা, তবু সেটির অনুমোদন ছিল কেবল তিনতলার। এই ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
বেআইনি ভবনের মাঝে নিরাপত্তার অভাব
পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, দুই ভবনের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ ফুট দূরত্ব থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দুটি ভবনের ফাঁক এক ফুটও নয়! এর ফলে ভবনের নিরাপত্তা যেমন কমছে, তেমনই বিপদ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয় এক দোকানি বলেন, “এলাকায় জমি পেলেই প্রোমোটারেরা বেআইনি ভবন তুলে ফেলছে। আর এই কাজে তাঁদের মদত দিচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। ইট, বালি, রড থেকে শুরু করে নির্মাণসামগ্রী সবই সরবরাহ হয় রাজনৈতিক দাদাদের মাধ্যমে। সবশেষে ভোগান্তি আমাদেরই।”
মৃত্যুর ঝুঁকি আর প্রশাসনিক উদাসীনতা
গার্ডেনরিচে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে নির্মীয়মাণ বেআইনি ভবন ভেঙে পড়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনার পর প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। ট্যাংরা ও বাঘা যতীনে হেলে পড়া ভবনের ঘটনাগুলি সেই ব্যর্থতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
স্থানীয়দের ক্ষোভ আর মেয়রের প্রতিক্রিয়া
বৃহস্পতিবার ট্যাংরার বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে এসে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের একজন বলেন, “মেয়র টক-টু-মেয়র অনুষ্ঠানে বলেছেন, বেআইনি নির্মাণে পুলিশ আর পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা টাকা নেয়। অথচ কাউন্সিলরদের বদনাম হয়। কিন্তু বাস্তবে, কাউন্সিলররাও এই বেআইনি নির্মাণে জড়িত। তাঁরা জানেন কোথায় কী হচ্ছে, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।”
এলাকার স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা বলছে, “আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। চারদিকে ভবন উঠছে, আকাশটাই আর দেখা যাবে না। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে পড়লে আমাদেরই ক্ষতি হবে।”
রাজনৈতিক মদতে বেআইনি নির্মাণ
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই অঞ্চলে প্রোমোটিং কার্যত শিল্পে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় যুবকদের রাজনৈতিক মদতে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, আর তার ফলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
উপসংহার
বেআইনি নির্মাণের কারণে শুধু আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে না, বাসিন্দাদের জীবনের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি কার্যকর না হলে ট্যাংরা, গার্ডেনরিচ বা অন্য কোনও এলাকার হেলে পড়া বাড়ি আরও বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। স্থানীয়দের দাবি, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে, এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ইডেনে খেলেননি শামি, চেন্নাইয়ে কি খেলবেন? সতীর্থ আরশদীপের মন্তব্যে ধোঁয়াশা


