Tuesday, November 11, 2025

পুরুষের শরীরে মারণ ছত্রাক: ম্যালেরিয়ার মশা দমনে জিনের ব্যবহার নিয়ে নতুন আশার আলো

Share

পুরুষের শরীরে মারণ ছত্রাক

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বিজ্ঞানীরা নিয়ে এসেছেন এক যুগান্তকারী পদ্ধতি। জিনতত্ত্বের প্রয়োগের মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার বাহক অ্যানোফিলিস মশাদের বংশবৃদ্ধি থামাতে একটি অভিনব কৌশল আবিষ্কার করেছেন পশ্চিম আফ্রিকার বার্কিনা ফাসো এবং আমেরিকার গবেষকরা। পুরুষ মশার শরীরে মারণ ছত্রাক প্রবেশ করিয়ে স্ত্রী মশাদের ধ্বংস করার এই পদ্ধতিটি ইতিমধ্যেই সফলতার সঙ্গে পরীক্ষা করা হয়েছে।

কীভাবে কাজ করবে এই পদ্ধতি?

পুরুষ মশার শরীরে প্রবেশ করানো হবে বিশেষভাবে তৈরি মারণ ছত্রাক। এই ছত্রাক, যা জিনগত ভাবে রূপান্তরিত, পুরুষ মশার শরীরে থাকা অবস্থায় তাদের স্বাভাবিক আচরণে তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে, এটি পুরুষ মশাদের মাধ্যমে স্ত্রী মশাদের কাছে পৌঁছাবে। স্ত্রী মশাদের আকৃষ্ট করার পর সঙ্গমের সময় ছত্রাকের রেণু তাদের শরীরে প্রবেশ করবে। এর পর মাত্র ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্ত্রী মশারা মারা যাবে। এর ফলে অ্যানোফিলিস মশাদের বংশবৃদ্ধি রোধ হবে এবং ম্যালেরিয়া ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।

মারণ ছত্রাক কীভাবে কাজ করে?

বিজ্ঞানীরা ‘এন্টোমোপ্যাথোজেনিক ফাঙ্গাস’ নামক বিশেষ এক প্রজাতির ছত্রাককে জিনগত রূপান্তরের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী এবং প্রাণঘাতী করেছেন। এই ছত্রাক কীটপতঙ্গের শরীরে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়া ঘটায়। জিনগত রূপান্তরের ফলে এই ছত্রাক কেবল প্রাণঘাতী বিষ তৈরি করে না, বরং এটি পুরুষ মশাদের আচরণেও কিছুটা পরিবর্তন আনে।

পূর্বের প্রচেষ্টা এবং এই পদ্ধতির বিশেষত্ব

জিনতত্ত্বের সাহায্যে মশা দমনের প্রচেষ্টা নতুন নয়। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ব্রাজিলে একটি ব্রিটিশ সংস্থার উদ্যোগে জিনগত রূপান্তরিত মশা ছাড়া হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এই পুরুষ মশাদের সঙ্গে সঙ্গমের পর স্ত্রী মশারা বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা হারাবে। কিন্তু ওই প্রচেষ্টা সফল হয়নি, কারণ স্ত্রী মশারা জিনগত ভাবে পরিবর্তিত পুরুষ মশাদের এড়িয়ে চলতে শিখেছিল।

তবে নতুন পদ্ধতিতে আগের সব ভুল শুধরে নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ছত্রাকের মাধ্যমে স্ত্রী মশাদের সরাসরি মৃত্যুর পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে আরও কার্যকর ফলাফল আশা করা হচ্ছে।

কেন প্রয়োজন নতুন পদ্ধতির?

ম্যালেরিয়া এখনও বিশ্বের অনেক দেশে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। অ্যানোফিলিস মশারা দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং রাসায়নিক কীটনাশকের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করছে। ফলে প্রচলিত পদ্ধতিতে এই মশাদের ধ্বংস করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই নতুন পদ্ধতি শুধু কার্যকরই নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী সমাধানও হতে পারে। রাসায়নিক স্প্রে বা কীটনাশকের চেয়ে এটি অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি।

এই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা

গবেষক এবং চিকিৎসকরা এই পদ্ধতিকে যুগান্তকারী বলে মানলেও এখনও কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি। চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের মতে, এই পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগে কতটা কার্যকারিতা দেখা যাবে এবং এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে কি না, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। বিশেষ করে, যদি জিনগত ভাবে পরিবর্তিত মশা কোনওভাবে মানুষকে কামড়ায়, তবে তার কি কোনও প্রভাব পড়বে?

তাছাড়া, এই পদ্ধতির পরীক্ষার স্তর এখনও শেষ হয়নি। তাই এটি বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

শেষ কথা

যদিও এই পদ্ধতি এখন পরীক্ষামূলক অবস্থায় রয়েছে, তবে এর সম্ভাবনা যথেষ্ট উজ্জ্বল। যদি এটি সাফল্য পায়, তবে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি হবে এক বড় পদক্ষেপ। এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই নতুন প্রয়োগ প্রমাণ করছে যে ম্যালেরিয়ার মতো মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছি। আশা করা যায়, শিগগিরই এই পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

আইএসএলে প্লে-অফের স্বপ্ন ভঙ্গ, ইস্টবেঙ্গল কোচের দুঃখপ্রকাশ

Read more

Local News