পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা বিশাল ‘বি’
ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের সান ফার্নান্ডো উপত্যকায় অবস্থিত বারব্যাঙ্ক শহরের নাম শুনলে প্রথমেই মনে আসে বিনোদন জগতের নামী স্টুডিওগুলোর কথা, যেমন ওয়াল্ট ডিজনি এবং ওয়ার্নার ব্রাদার্স। তবে এই শহরের আরেকটি পরিচিতি লুকিয়ে রয়েছে একটি অদ্ভুত রহস্যে—ভার্ডুগো পাহাড়ের গায়ে বিশাল সাদা রঙের ইংরেজি হরফ ‘বি’।
রহস্যের জন্ম
পাহাড়ের বুকে খোদাই করা এই ‘বি’-এর উৎস নিয়ে নানা তত্ত্ব ঘোরাফেরা করছে। এটি কারা তৈরি করেছে? কেনই বা? এর কোনো সুস্পষ্ট উত্তর নেই। তবে সবাই একমত যে এটি মানবসৃষ্ট। অনেকের ধারণা, এটি বারব্যাঙ্ক শহরের নামের আদ্যক্ষর থেকে অনুপ্রাণিত।
বারব্যাঙ্ক শহরের পরিচিতি
বারব্যাঙ্ক শহরটি ১৮৬৭ সালে দন্ত চিকিৎসক ডেভিড বারব্যাঙ্কের হাত ধরে গড়ে ওঠে। প্রথমে একটি ভেড়ার খামার এবং গম উৎপাদনের অঞ্চল হিসেবে পরিচিত এই শহর ধীরে ধীরে লস অ্যাঞ্জেলেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। কিন্তু শহরের গর্ব হলেও, এই ‘বি’-এর সঙ্গে ডেভিডের কোনো সম্পর্ক নেই।
‘বি’ তৈরির গল্প
অনেকের মতে, এই ‘বি’-এর উৎপত্তি ১৯২০ সালে বারব্যাঙ্ক হাই স্কুলের একটি ক্লাবের সদস্যদের হাত ধরে। তারা পাহাড়ের গায়ে পাথর দিয়ে এই প্রতীকটি তৈরি করেছিল। কারণ, বারব্যাঙ্কের নামের প্রথম অক্ষর ‘বি’। তবে অন্য একটি স্কুল—জন বারোগোস হাই স্কুল—এই দাবি মানতে নারাজ। এই দুই স্কুলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘বি’-কে নিজেদের দাবি করার প্রচেষ্টা দেখা যায়।
প্রতি বছরই এই প্রতীকটি নতুন করে রাঙানো হয়, কখনও বারব্যাঙ্ক হাই স্কুলের নীল-সাদা রঙে, আবার কখনও জন বারোগোসের লাল-সোনালি রঙে। এই প্রতীকটি দুই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছে যেমন গর্বের বিষয়, তেমনই এক প্রতীকী লড়াইয়েরও কেন্দ্রবিন্দু।
অন্য তত্ত্ব ও ইতিহাস
বিশের দশকে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় পাহাড়ের গায়ে বিশাল ইংরেজি হরফ বা শব্দ লেখা বেশ প্রচলিত ছিল। সেই সময় অনেক স্কুল-কলেজ তাদের নাম বা প্রতীক এভাবে ফুটিয়ে তুলত। এমনকি বিমানচালকদের সুবিধার জন্য ছোট আঞ্চলিক বিমানবন্দরগুলোতেও পাহাড়ের গায়ে বিশেষ চিহ্ন বা বাক্যাংশ লেখা হতো।
এই ‘বি’-এর সঙ্গে হলিউডের বিখ্যাত ‘হলিউডল্যান্ড’ চিহ্নটির তুলনা করা হয়। দুটি ক্ষেত্রেই এগুলো কেবল স্থানীয় গর্বের চিহ্ন নয়, বরং মানুষকে ওই অঞ্চলের ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে রাখার এক মাধ্যম।
‘বি’-এর আধুনিক সংস্করণ
সময় পেরোতে পেরোতে এই প্রতীকটিকে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। প্রথমে এটি পাথর দিয়ে তৈরি করা হলেও পরে এতে প্লাস্টিকের প্রলেপ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে লা কানাডা ফ্লিনট্রিজের সেন্ট ফ্রান্সিস হাই স্কুলের এক ছাত্র এটি পরিষ্কার এবং সংরক্ষণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।
বারব্যাঙ্ক প্রশাসনের ভূমিকা
বারব্যাঙ্কের প্রশাসন এই রহস্যের সমাধান করতে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। তাদের মতে, এই প্রতীকটি শহরের গর্ব এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করার একটি মাধ্যম। প্রতিবছর বহু মানুষ ট্রেকিং করে এই ‘বি’-এর কাছে পৌঁছন এবং এটি উপভোগ করেন।
পর্যটকদের আকর্ষণ
রহস্য সমাধান হোক বা না হোক, পর্যটকদের কাছে এই ‘বি’ এক অনন্য আকর্ষণ। পাহাড়ে বসে তৈরি এই বিশাল চিহ্ন শহরের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে মানবসৃষ্ট এই প্রতীক মিশে গিয়ে একটি দারুণ অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
উপসংহার
বারব্যাঙ্কের ‘বি’-এর সৃষ্টি নিয়ে যত তর্কই হোক, এটি আজও শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় রহস্য। এটি শুধু একটি প্রতীক নয়, বরং বারব্যাঙ্ক শহরের ইতিহাস, গর্ব এবং ঐতিহ্যের এক নিদর্শন। সময়ের সঙ্গে এই ‘বি’ আরও রহস্যময় হয়ে উঠেছে এবং হয়তো ভবিষ্যতেও এ নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকবে।
‘তুমিই আমার আলো’, হৃতিককে জন্মদিনে শুভেচ্ছায় ভরালেন প্রাক্তন স্ত্রী সুজ়ান ও প্রেমিকা সাবা


