Monday, December 1, 2025

পাবজি থেকে সাইবার অপরাধ: ট্যাব-কেলেঙ্কারির নেপথ্যের চক্র

Share

পাবজি থেকে সাইবার অপরাধ

পশ্চিমবঙ্গে ট্যাব-কেলেঙ্কারিতে রাজ্যজুড়ে অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে যে, ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের টাকা হাতানোর পেছনে রয়েছে একদল সাইবার অপরাধী, যারা একসময় পাবজির মতো অনলাইন গেমের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা গড়ে তুলেছিল।

সাইবার অপরাধের সূচনা

এই চক্রের বেশিরভাগ সদস্যই তরুণ এবং যুবক, যারা প্রথমে অনলাইন গেম খেলায় পারদর্শী হয়। স্কুল বা কলেজে পড়া অবস্থায় বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বা স্কলারশিপের মাধ্যমে মোবাইল কিনে গেম খেলায় মনোনিবেশ করত তারা। ক্রমে অনলাইন গেম থেকে জুয়ার আসরে প্রবেশ করে টাকার নেশায় অনলাইনে নানা প্রতারণার কৌশল রপ্ত করে। একপর্যায়ে তারা স্থানীয় পর্যায়ে সাইবার ক্যাফে বা অনলাইন সার্ভিস সেন্টার খুলে, সরকারি প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহ করে তা থেকে আর্থিক প্রতারণার পরিকল্পনা করতে শুরু করে।

‘তরুণের স্বপ্ন’ থেকে ‘ঐক্যশ্রী’

প্রথম দিকে এই চক্র ‘ঐক্যশ্রী’ প্রকল্পের টাকা হাতানোর চেষ্টা করেছিল। ২০২৩ সালে নদিয়া জেলার দুটি কলেজে এই প্রকল্পের টাকার জালিয়াতি ধরা পড়ে। পরে মুর্শিদাবাদ থেকেও গ্রেফতার হয় কয়েকজন। কিন্তু ঐক্যশ্রীর টাকার হাতানোর প্রচেষ্টায় পুরোপুরি সফল না হতে পারলেও তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এর পর তাদের লক্ষ্য ছিল ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প। কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় সে ক্ষেত্রেও তারা ব্যর্থ হয়। অবশেষে, তারা সফলভাবে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে হানা দেয়।

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের অধীনে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু এই চক্র প্রায় ২ হাজার পড়ুয়ার ট্যাব কেনার টাকার জালিয়াতি করে।

সাইবার ক্যাফে থেকে আন্তঃরাজ্য চক্র

সাইবার ক্যাফে চালানোর আড়ালে চক্রটি বহু মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়। আধার, ব্যাংকের তথ্য সংগ্রহ করে তারা বড় ধরনের প্রতারণার ছক কষে। বিভিন্ন স্কুলের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের তথ্য পাল্টে দেয়। কিছু ক্ষেত্রে সিম কার্ড ও ভুয়ো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকার সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। এমনকি আইএফএসসি কোড বদলে একই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

আন্তঃরাজ্য যোগাযোগ

এই চক্রের কাজে বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের সাইবার অপরাধীদের সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি রাজস্থানের কিছু চক্রের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

তদন্তের অগ্রগতি

ইতিমধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। ইসলামপুর ও ফরাক্কা থেকে পাঁচটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, এবং অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারের পর উঠে আসছে নতুন তথ্য। তদন্তকারীদের মতে, এই চক্র শুধু ‘তরুণের স্বপ্ন’ নয়, ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প থেকেও টাকা সরানোর পরিকল্পনা করেছিল।

পাবজি খেলা থেকে সাইবার অপরাধের দুনিয়ায় প্রবেশ করা এই তরুণরা এখন তদন্তকারীদের নজরে। তাদের গ্রেফতার এবং সাইবার অপরাধ বন্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই কেলেঙ্কারি সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তাকে আরও বেশি স্পষ্ট করেছে।

Read more

Local News