Monday, December 8, 2025

পশ্চিমবঙ্গে সুরাহা কেন্দ্রের দুরবস্থা: নির্যাতিতাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নেই

Share

পশ্চিমবঙ্গে সুরাহা কেন্দ্রের দুরবস্থা

রাজ্যে সুরাহা কেন্দ্রের নামে যে পরিষেবাগুলি দেওয়া হয়, তা বাস্তবে কার্যকর নয়। নির্যাতিতারা পুলিশের সাহায্য পেতে ভয় পান এবং বিশেষভাবে সক্ষম মহিলাদের জন্য কোনও সহায়ক ব্যবস্থা নেই।

রাজ্যে গার্হস্থ্য হিংসা, যৌন নিগ্রহ, অ্যাসিড হামলা কিংবা পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা— নানা ধরনের নির্যাতন প্রতিদিনই ঘটে। কিন্তু, এই সব ঘটনার পর অনেক সময়েই নির্যাতিতারা পুলিশ বা কোর্ট-কাছারির জটিলতা এড়িয়ে যান। বিশেষত, মহিলা নির্যাতিতাদের মধ্যে অনেকেই পুলিশি সহায়তার কথা চিন্তা করতে পারেন না, বিশেষভাবে সক্ষম মহিলাদের জন্য এই সমস্যা আরও বৃহৎ। এই পরিস্থিতিতে যদি কোনও নির্যাতিতা সহায়তার জন্য সুরাহা কেন্দ্রের দ্বারস্থ হতে চান, তবে তাঁদের জন্য প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা অত্যন্ত সীমিত।

এক ছাদের তলায় সহায়তা কেন্দ্রের অভাব


বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া, কর্মরত, বা বিশেষভাবে সক্ষম মহিলাদের জন্য, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সুরাহা কেন্দ্র তাদের জন্য বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাজ্যে খাতায়কলমে ২২টি সুরাহা কেন্দ্রের অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ কেন্দ্রেই প্রয়োজনীয় সেবা বা পরিকাঠামো নেই।

মঙ্গলবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে ‘শ্রুতি ডিজ়এবিলিটি রাইটস সেন্টার’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, এবং উত্তরপ্রদেশে তাদের করা সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে। এই সমীক্ষা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে সুরাহা কেন্দ্রের কার্যক্রম অত্যন্ত দুর্বল। অন্যান্য রাজ্যে কিছুটা কার্যকরী ব্যবস্থা থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গে অধিকাংশ সুরাহা কেন্দ্র কার্যত অকার্যকর।

সুরাহা কেন্দ্রের দুরবস্থা


শম্পা সেনগুপ্ত, যিনি ‘শ্রুতি ডিজ়এবিলিটি রাইটস সেন্টার’-এর কর্ণধার, জানিয়েছেন, সমীক্ষায় জানা গেছে, রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সুরাহা কেন্দ্রগুলির কার্যকলাপ অত্যন্ত খারাপ। বিজয়গড় স্টেট জেনারেল হাসপাতাল এবং বারাসত জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, এই সুরাহা কেন্দ্রগুলোতে সেবা কোনোভাবেই পাওয়া যায় না। বিজয়গড়ের সুরাহা কেন্দ্রের কোনো পরিষেবা নেই এবং বারাসত জেলা হাসপাতালে মাত্র একজন কর্মী উপস্থিত। সুতরাং, নির্যাতিতাদের সরাসরি সুরাহা কেন্দ্রে না এসে ফোনে পরামর্শ নেওয়ার উপরেই গুরুত্ব দেওয়া হয়।

এছাড়া, বিশেষভাবে সক্ষম মহিলাদের জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই। লখনউয়ের সুরাহা কেন্দ্র মডেল হিসেবে দেখা হলেও, সেখানে বিশেষভাবে সক্ষম মহিলাদের জন্যও কোনো সুবিধা নেই। এই অবস্থায়, নির্যাতিতাদের জন্য যতটা প্রয়োজন, সুরাহা কেন্দ্রগুলো তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

আইনি সহায়তা ও পরিকাঠামোর অভাব


২০১৩-১৪ সালে, দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পর কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক সুরাহা কেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু বাস্তবে এই কেন্দ্রগুলোতে কার্যকরী পরিকাঠামো এবং সচেতনতার অভাব স্পষ্ট। সুরাহা কেন্দ্রগুলোতে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার কথা থাকলেও, বেশিরভাগ কেন্দ্র সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্তই খোলা থাকে। সেখানে মনোবিদ বা আইন বিশেষজ্ঞের উপস্থিতি নেই এবং বিশেষভাবে সক্ষম নির্যাতিতাদের জন্য কোন ব্যবস্থা নেই।

সমীক্ষার ফলাফল


সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, পশ্চিমবঙ্গে মোট ২২টি সুরাহা কেন্দ্র রয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে অধিকাংশই অকার্যকর। অন্যদিকে, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ও উত্তরপ্রদেশে কিছু সুরাহা কেন্দ্র কাজ করলেও, সেখানে বিষয়টি আরও উন্নত। পশ্চিমবঙ্গে যেহেতু অনেক কেন্দ্রই সাধারণ জনগণের কাছে পরিচিত নয়, সেহেতু বিপদে পড়া মহিলাদের কাছে এসব কেন্দ্র একেবারেই অজ্ঞাত।

রাজ্য সরকারের উদাসীনতা


এ রাজ্যে সুরাহা কেন্দ্রগুলো কার্যকরভাবে কাজ না করার জন্য সরকারের তরফ থেকে কোনও কার্যকরী উদ্যোগের অভাব রয়েছে। রাষ্ট্রীয় নীতি এবং সামাজিক সচেতনতার অভাবের কারণে এই কেন্দ্রগুলোও ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে।

উপসংহার


রাজ্যে সুরাহা কেন্দ্রগুলো কার্যকর নয়, যার কারণে নির্যাতিতারা তাদের সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না। পুলিশ বা কোর্ট-কাছারি থেকে বিরত থাকা মহিলাদের জন্য সুরাহা কেন্দ্রগুলির কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই কেন্দ্রগুলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং বিশেষভাবে সক্ষম মহিলাদের জন্য আরও কার্যকর সহায়তা প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে।

Read more

Local News