‘নকল’ বিদেশিনি বধূদের দাপটে বিপর্যস্ত সিঙ্গাপুর
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ সিঙ্গাপুর এক অদ্ভুত সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। দেশটির প্রশাসন এখন উদ্বিগ্ন এক বিশেষ ধরনের অপরাধ প্রবণতা নিয়ে—‘নকল বিয়ে’। বিদেশি মহিলারা স্থানীয় পুরুষদের সঙ্গে মিথ্যা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সিঙ্গাপুরের অভিবাসন আইনকে কাজে লাগাচ্ছেন। এর পেছনে কাজ করছে এক সুসংগঠিত সিন্ডিকেট।
‘নকল বিয়ে’ কী এবং কেন এটি সমস্যা?
সিঙ্গাপুরের অভিবাসন আইনের আওতায়, যদি কোনও বিদেশি নারী স্থানীয় পুরুষের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তবে তিনি স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পান। এর পাশাপাশি কাজের সুযোগ এবং অন্যান্য সামাজিক সুবিধাও তাঁর জন্য উন্মুক্ত হয়। এই সুবিধাগুলোকে কাজে লাগাতে বিদেশি মহিলারা স্থানীয় পুরুষদের অর্থের লোভ দেখিয়ে নকল বিয়েতে অংশ নিচ্ছেন।
এই বিয়ে একেবারে নিয়ম মেনে সম্পন্ন হয়—আংটি বদল, মালাবদল, এমনকি বরযাত্রী ও অতিথির উপস্থিতি। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই নবদম্পতি আলাদা হয়ে যান এবং পুরো বিষয়টি একটি প্রহসনে পরিণত হয়।

কীভাবে কাজ করছে সিন্ডিকেট?
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য স্ট্রেট টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরে এই নকল বিয়ের আয়োজন করছে সিন্ডিকেট চক্র। বিদেশি মহিলারা মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান করেন, আর সেই অর্থে স্থানীয় যুবকরা এই মিথ্যা বিবাহে রাজি হন। সিন্ডিকেট এই বিয়ের যাবতীয় আয়োজন করে এবং প্রশাসনের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য প্রমাণপত্রও জাল করে।
অপরাধের ক্রমবৃদ্ধি
সিঙ্গাপুরের অভিবাসন দফতরের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড চেকপয়েন্ট অথরিটি বা আইসিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩২টি নকল বিয়ের ঘটনা ধরা পড়েছে। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৪।
প্রশাসনের উদ্বেগ
আইসিএর তদন্তে উঠে এসেছে, সহজে অর্থ উপার্জনের লোভে স্থানীয় যুবকেরা এই বেআইনি কাজে যুক্ত হচ্ছেন। যদিও এটি পুরোপুরি বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তবে এই সিন্ডিকেট চক্র তাদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি করে চলেছে।
কঠোর শাস্তির বিধান
‘নকল বিয়ে’র জন্য সিঙ্গাপুরের আইনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত জেল এবং ১০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার জরিমানা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে উভয় শাস্তি একসঙ্গে দেওয়ারও নজির রয়েছে।
তদন্তের চ্যালেঞ্জ
অভিযুক্ত সিন্ডিকেট অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে এই কাজ পরিচালনা করছে। সাজানো আত্মীয়স্বজন ও সাক্ষীর মাধ্যমে এই বিয়েকে বাস্তব মনে করানোর চেষ্টা করা হয়। তদন্তকারীদের মতে, স্থানীয়দের কাছ থেকে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযুক্তদের ধরতে হচ্ছে।
সামাজিক প্রভাব এবং নিরাপত্তা
অভিবাসন দফতরের গোয়েন্দা বিভাগের ইনস্পেক্টর মার্ক চাই বলেছেন, ‘‘নকল বিয়ের কারণে সিঙ্গাপুরে সামাজিক এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিদেশি মহিলারা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়তে পারেন, যা স্থানীয় যুবকদেরও অপরাধে জড়িয়ে ফেলতে পারে।’’
যেভাবে ধরা পড়ছে অপরাধীরা
বিদেশি স্ত্রীর ব্যবহার করা জিনিস বা পোশাক সম্পর্কে তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে সন্দেহের তালিকায় আসছেন স্থানীয় যুবকেরা। এই বিষয়েই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২০২৪ সালের জুন মাসে সিঙ্গাপুর আদালত নকল বিয়ের জন্য ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে, যার মধ্যে ছয়জন ভিয়েতনামি নারী এবং সাতজন স্থানীয় বাসিন্দা।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
অভিবাসন দফতর ভিজিট পাসের আইনে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে। বিয়ের পর বিদেশি নারীদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
উপসংহার
‘নকল বিয়ে’র ঘটনা সিঙ্গাপুরের সামাজিক কাঠামোকে নাড়া দিয়েছে। এই বেআইনি কার্যকলাপ রোধে প্রশাসন যতই কঠোর পদক্ষেপ করুক না কেন, অর্থলিপ্সু স্থানীয়দের এতে জড়িয়ে পড়া বন্ধ করা যাচ্ছে না। এখন দেখার বিষয়, এই সমস্যার মোকাবিলায় প্রশাসন কীভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়।
কুলতলিতে বাঘের সন্ধানে বনদফতরের তৎপরতা: মাকড়ি নদী পেরিয়ে জলপথে রয়্যাল বেঙ্গলের খোঁজ


