তালিবানে দ্বন্দ্বের আগুন
আফগানিস্তানের তালিবান শাসনের ভিত নড়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে। তালিবান প্রধান হিবাতুল্লাহ আখুন্দজ়াদা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানির তীব্র মতবিরোধ দলকে বিভাজনের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে। এ পরিস্থিতি শুধু আফগানিস্তান নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার পক্ষেই বিপজ্জনক।
তালিবানের ভিতরে এখন প্রবল উত্তেজনা। একদিকে রয়েছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজ়াদা—যাঁর কথায় এখনো একচেটিয়া চলে আফগানিস্তান। আর অন্যদিকে তালিবানেরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি, যিনি নিজে হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান এবং তালিবানের কট্টর মিত্র।
এই দুই নেতার মধ্যে সম্প্রতি প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের জেরে তৈরি হয়েছে দুটি শক্তিশালী গোষ্ঠী। আফগান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আখুন্দজ়াদা চাচ্ছেন হাক্কানিকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে, আর হাক্কানি পাল্টা চেষ্টা চালাচ্ছেন দলকে নিজের দিক টানার।
⚔️ কন্দহরে বৈঠক ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি
বৈরিতা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, সমাধান খুঁজতে গত মার্চে কন্দহরে বসেছিল গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। সেখানে হাক্কানি সরাসরি আখুন্দজ়াদার ‘চরম মৌলবাদী নীতি’র কড়া সমালোচনা করে তাঁকে হুঁশিয়ারি দেন—এই পথ থেকে না সরে এলে, নেতৃত্বের একাংশ তালিবান ছেড়ে দেবে।
🧩 বৈঠকের মধ্যস্থতায় ছিলেন কে?
তালিবানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহম্মদ ইয়াকুব ও গোয়েন্দাপ্রধান আব্দুল হক ওয়াসিক ওই বৈঠকে মধ্যস্থতার ভূমিকায় ছিলেন। যদিও আলোচনায় কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
🌍 আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও সিআইএ-এর সম্ভাব্য ভূমিকা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে আফগানিস্তানে ফের কুর্সি বদলের চেষ্টা করছে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। এমনকি সৌদি আরব সফরের সময় গোপনে হাক্কানির সঙ্গে দেখা করেছে তারা। তাঁদের লক্ষ্য—হাক্কানিকে সামনে এনে তালিবান সরকারকে ভাঙন ধরানো।
🇮🇳 ভারতের জন্য কী বার্তা?
আফগানিস্তানে যদি তালিবান ভেঙে পড়ে, তা ভারতের জন্যও বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। কারণ হাক্কানির পাকিস্তানঘেঁষা মনোভাব এবং অতীতে আইএসআইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে উসকানি দিতে পারে।
🔥 কোথা থেকে শুরু এই দ্বন্দ্ব?
সম্প্রতি হাক্কানির বিদেশ সফরের সময় আখুন্দজ়াদা তাঁর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ক্ষমতা কেড়ে নেন। পরে তালিবান মুখে বললেও, হাক্কানি এতে চরম ক্ষুব্ধ হন। আরও অভিযোগ, আখুন্দজ়াদা কিছু নির্দিষ্ট অনুগামীর হাতে সব ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন, যার ফলে দলের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়ছে।
📉 জনসমর্থনও কমছে তালিবানের
হাক্কানির মতে, আখুন্দজ়াদার উগ্র নীতির জন্যই আন্তর্জাতিক মহলে কাবুল দিন দিন একঘরে হয়ে পড়ছে। আফগান জনতার মধ্যেও কমছে তালিবানের গ্রহণযোগ্যতা—এই অবস্থায় ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন।
📌 উপসংহার:
তালিবানের ভেতরে এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আফগানিস্তানে আবারও অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। বিশ্বশক্তিগুলি পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে তৈরি, আর ভারত সহ প্রতিবেশী দেশগুলিরও নজর এখন কাবুলের দিকেই। প্রশ্ন একটাই—তালিবান কি নিজেদের ভাঙনের আগুন সামলাতে পারবে? নাকি আফগানিস্তান আবারও জ্বলবে গৃহযুদ্ধের আগুনে?
চুম্বন নয়, কবিতার ছোঁয়ায় প্রেম ফুটল শ্রাবন্তীর খোলা পিঠে!