Monday, December 1, 2025

টালিগঞ্জে কাটা-মাথার রহস্য: রাজমিস্ত্রির সঙ্গে সম্পর্কের জেরে নারকীয় হত্যাকাণ্ড!

Share

টালিগঞ্জে

কলকাতার টালিগঞ্জের গ্রাহামস রোডের এক অভিজাত এলাকায় ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাকাণ্ডের রহস্য কিছুটা উন্মোচিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে একটি বহুতলের পেছনের ভ্যাট থেকে উদ্ধার হয় এক তরুণীর কাটা মাথা। ঘটনাস্থল ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রক্ত তখনও তাজা ছিল। পুলিশের ধারণা, মাত্র ১২ ঘণ্টা আগে ওই নারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনার প্রাথমিক পর্যায়: আতঙ্কের শুরু

টালিগঞ্জের এই অভিজাত এলাকায়, যেখানে সাধারণত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে, সেখানে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। সিসিটিভি ফুটেজ এবং স্নিফার কুকুর কাজে লাগিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। স্থানীয় এক চা বিক্রেতা জানিয়েছিলেন, তিনি প্রায়শই ওই মহিলাকে সকালে আসতে এবং বিকেলে যেতে দেখতেন। ধারণা করা হয়, তিনি কোথাও গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন।

তদন্তে চমকপ্রদ অগ্রগতি

মাত্র এক দিনের মধ্যেই তদন্তে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। জানা গেছে, নিহত তরুণী দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা ছিলেন। তার সঙ্গে এক রংমিস্ত্রির সম্পর্ক ছিল, যা এই হত্যাকাণ্ডের কেন্দ্রে রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। ডায়মন্ড হারবারের বাশুলডাঙা এলাকা থেকে সন্দেহভাজন ওই রংমিস্ত্রিকে আটক করেছে পুলিশ।

হত্যার নির্মম বর্ণনা

পুলিশ জানিয়েছে, মাথার পেছনে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে ওই মহিলাকে অজ্ঞান করা হয়। তারপর শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় এবং শেষে মাথা কেটে আলাদা করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং নারকীয় ছিল।

সম্পর্কের জেরে হত্যাকাণ্ড?

নিহত এবং অভিযুক্ত রংমিস্ত্রির মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি এখন পুলিশের তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু। কেন তিনি এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটালেন তা জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, টাওয়ার ডাম্পিং পদ্ধতি ব্যবহার করে অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই সম্পর্কের পেছনে কী এমন দ্বন্দ্ব বা ক্ষোভ ছিল যা এই নৃশংসতার জন্ম দিল?

অতীতের এক ভয়াবহ স্মৃতি

এই ঘটনাটি অনেকের মনে করিয়ে দিয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ঘটে যাওয়া ওয়াটগঞ্জের আরেক নারকীয় হত্যাকাণ্ডের কথা। সেসময় সত্য ডক্টর লেনের সিআইএসএফের একটি পরিত্যক্ত বারাক থেকে এক মহিলার কাটা মাথা, হাত ও পা উদ্ধার হয়েছিল। সেই ঘটনায়ও শহরের বাসিন্দারা চরম আতঙ্কিত হয়েছিলেন।

বাকি দেহাংশের খোঁজে অভিযান

নিহত মহিলার দেহের বাকি অংশ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত রংমিস্ত্রির জবানবন্দি এবং প্রযুক্তিগত তথ্যের সাহায্যে পুলিশ দেহের বাকি অংশ উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে।

সমাজের উদ্বেগ ও পুলিশি বার্তা

টালিগঞ্জের মতো অভিজাত এলাকায় এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। শহরবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে এবং শহরের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবরকম চেষ্টা করবে।

শেষ কথা

এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ডের কাহিনি নয়, বরং একটি বড় সামাজিক সমস্যা উন্মোচন করে। সম্পর্কের টানাপোড়েনে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি যাতে আর না ঘটে, সে জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করে সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তা দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

Read more

Local News