ঝাড়গ্রামে চিকিৎসকের মৃত্যু
ঝাড়গ্রামের রঘুনাথপুরে একটি লজ থেকে উদ্ধার হয়েছে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসক দীপ্র ভট্টাচার্যের দেহ। বয়স মাত্র ৩২ বছর। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ধারণা করছে, এটি আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে, কারণ ঘটনাস্থল থেকে একটি সিরিঞ্জও পাওয়া গেছে। মৃত্যুর আগে দীপ্র তাঁর স্ত্রীকে একটি মেসেজ পাঠিয়েছিলেন, যেখানে ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপড়েন এবং পেশাগত হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে, চিকিৎসক হিসেবে তাঁর পেশাগত জীবনে নানাবিধ মানসিক চাপে থাকা এবং কর্মস্থলে ঘটে যাওয়া আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রভাবও এই সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্যক্তিগত জীবনের টানাপড়েন এবং মানসিক অবস্থা
দীপ্রের স্ত্রীও পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী এবং বর্তমানে কলকাতায় থাকেন। মৃত্যুর আগে দীপ্র স্ত্রীকে একাধিক মেসেজ পাঠান, যেখানে তিনি তাঁদের বিবাহিত জীবনের সমস্যাগুলি তুলে ধরেন। দীপ্রের মেসেজে অতীতের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গও ছিল, যা তাঁর মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। এই মেসেজে তিনি তাঁর স্ত্রীকে নতুন জীবন শুরু করার কথা বলেন। দীপ্রের এই ব্যক্তিগত সঙ্কট যে তাঁর মানসিক অবস্থা ক্রমেই নাজুক করে তুলেছিল, তা তাঁর মেসেজ থেকে স্পষ্ট।
পেশাগত জীবনে আরজি কর মেডিক্যালের তিক্ত অভিজ্ঞতা
মেসেজে উল্লেখ রয়েছে যে, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তাঁর পেশাগত জীবনের কিছু নেতিবাচক অভিজ্ঞতা দীপ্রকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল। তিনি লেখেন, “নোংরা পৃথিবী, অবিচার, নোংরামি দেখেও অন্ধ হয়ে থাকে সবাই।” তাঁর পেশাগত জীবনেও তিনি ন্যায্যতাবোধ ও মূল্যবোধের অভাব দেখেছেন, যা তাঁর হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছিল। তিনি অনুভব করছিলেন চারপাশে প্রচুর অন্ধকার, যা থেকে মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছা ছিল না।
স্ত্রীকে পাঠানো শেষ মেসেজে হতাশার চিত্র
দীপ্রের মেসেজের বড় অংশজুড়ে ছিল তাঁর মানসিক অবস্থা ও হতাশার চিত্র। তিনি লেখেন, অতীতের স্মৃতি তাঁকে এখনও তাড়া করে ফেরে এবং তাঁর মনে গভীর দাগ রেখে গেছে। তিক্ত অভিজ্ঞতা কাটিয়ে ওঠার আগেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর জন্য ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। তিনি মেসেজে লিখেছেন যে, পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাঁকে এই কঠিন পথে পা বাড়াতে হয়েছে।
পুলিশি তদন্তের অগ্রগতি
ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ জানিয়েছেন, দীপ্রের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং শুক্রবার রিপোর্ট পাওয়া যাবে। মেসেজে ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি মানসিক চাপ ও পেশাগত সমস্যার বিষয়টি উঠে এসেছে, যা তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল। পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্তের কাজ শুরু করেছে এবং সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের সুপার অনুরূপ পাখিরা জানিয়েছেন যে, দীপ্র সম্প্রতি পুজোর ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন এবং তাঁর মৃত্যুতে পুরো হাসপাতাল শোকাহত। তাঁর আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা না থাকলেও, কী কারণে তিনি এই পদক্ষেপ নিলেন তা হাসপাতালের সুপার নিজেও বুঝে উঠতে পারছেন না। এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পিছনে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, পেশাগত চাপ ও মানসিক সঙ্কটের প্রভাব কতটা ছিল তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে পরিষ্কার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


