জয়নগরে কিশোরী খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত
জয়নগরের নাবালিকা খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করল বারুইপুর মহকুমা আদালত। শুক্রবার সাজা ঘোষণা করবে বারুইপুরের অতিরিক্ত জেলা দায়রা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। এই দ্রুততম বিচার প্রক্রিয়া আইনের ইতিহাসে একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।
গত ৪ অক্টোবর, ন’বছরের এক কিশোরী কোচিং থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। ওই রাতেই তার দেহ উদ্ধার হয় একটি পুকুর থেকে। ঘটনা জানাজানি হতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর পরই পুলিশ দ্রুত তদন্তে নামে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ভিত্তিতে অভিযুক্ত যুবককে চিহ্নিত করে পুলিশ। ফুটেজে দেখা যায়, সাইকেলে কিশোরীকে নিয়ে যাচ্ছে অভিযুক্ত। তাকে প্রথমে আটক করা হয় এবং পরে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্ত এবং আদালতে প্রক্রিয়া
ঘটনার পর পরই বারুইপুর পুলিশ প্রশাসন তৎপর হয়। ৫ অক্টোবর অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করা হয়। ৭ অক্টোবর বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়। মামলার তদন্ত দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করে ৩০ অক্টোবর, মাত্র ২৫ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। এরপর ৫ নভেম্বর থেকে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মোট ৩৬ জন সাক্ষী তাদের বয়ান দেন।
বৃহস্পতিবার, বারুইপুর পকসো আদালতের বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন। সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, “এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস আরও দৃঢ় করবে। আমি খুশি যে এক মাসের মধ্যেই শুনানি শেষ করা সম্ভব হয়েছে। এই রায় সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
মৃতের পরিবারের অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া
নিহত কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে জয়নগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। পরিবারের দাবি, প্রথমে মহিষমারিতে অভিযোগ জানাতে গেলে সেখান থেকে তাদের জয়নগর থানায় পাঠানো হয়। তাদের বক্তব্য, পুলিশ শুরু থেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখলে হয়তো শিশুটিকে বাঁচানো যেত।
মৃতের বাবা জানিয়েছেন, “আমরা পুলিশের উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম এবং তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু আমরা অভিযুক্তের ফাঁসি চাই। আমার মেয়ের সঙ্গে যে অন্যায় করা হয়েছে, তার শাস্তি সর্বোচ্চ হওয়া উচিত।”
কীভাবে তদন্ত এগিয়েছে?
তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। অভিযুক্তকে চিহ্নিত করার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো ঘটনা উন্মোচন করা হয়। এরপর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু করা হয়।
সরকারি পক্ষের আইনজীবীর দক্ষ উপস্থাপনা এবং সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মাত্র এক মাসের মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ মেলায় আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
দৃষ্টান্তমূলক রায় আশা
এই মামলার রায় দ্রুততার সঙ্গে ঘোষণা করা সমাজে একটি বার্তা দেবে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস বাড়াবে। একই সঙ্গে শিশু ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
শুক্রবার, অভিযুক্তের শাস্তি ঘোষণা করা হবে। পরিবারের প্রত্যাশা, দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক ন্যায়বিচারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

