চোকসীর প্রত্যর্পণে বাঁধা!
বহু প্রতীক্ষার পর ভারতের কুখ্যাত হীরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসী ধরা পড়লেও, তাঁকে এ দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা এখনও সহজ নয়। কারণ, বেলজিয়ামের মাটিতে আটক হওয়ায় এখন পুরো বিষয়টি সেই দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার আওতায়।
ভারতের অনুরোধে চোকসীর প্রত্যর্পণ হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত দেবে বেলজিয়ামের আদালত। আদালত যদি সবুজ সংকেত দেয়, তবেই প্রশাসনিক স্তরে অনুমোদন মিলবে এবং তারপরেই তাঁকে ভারতে ফেরানো সম্ভব হবে। কিন্তু তাতেও রয়েছে কিছু জটিলতা—বিশেষ করে চোকসীর শারীরিক পরিস্থিতি এবং তাঁর আইনজীবীদের কৌশল।
🔎 প্রত্যর্পণের পথ কেন দীর্ঘ?
আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রক্রিয়া একাধিক ধাপ অতিক্রম করে। প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আমন লেখি জানিয়েছেন, কোনও নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য আগে একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেই ভিত্তিতে অভিযুক্তকে আটক করা হয় এবং পরে প্রত্যর্পণের আবেদন জানানো হয়। এই আবেদনে জানানো হয়, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে এবং কেন তাঁকে বিচারযোগ্য করতে দেশে ফেরানো প্রয়োজন।
চোকসীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে—তাঁকে আটক করা হয়েছে, কিন্তু তাঁকে এখন বেলজিয়ামের আদালতে জামিনের আবেদন করার অধিকার রয়েছে। যদি তিনি জামিন পান, তবুও তিনি দেশ ছেড়ে যেতে পারবেন না।
🛑 আইনি চ্যালেঞ্জ: মানবাধিকার ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য?
আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে মনে করছেন, চোকসীর আইনি দল বিষয়টিকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। তারা দাবি করতে পারে যে, ভারতের আবেদনের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। অথচ, ভারত ও বেলজিয়ামের দ্বিপাক্ষিক প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বলা আছে, এমন পরিস্থিতিতে অনুরোধ বাতিল করা যেতে পারে।
তবে লেখির মতে, এই যুক্তি আইনি দৃষ্টিতে ‘ভিত্তিহীন’। বহু সময়েই অভিযুক্তরা এ ধরনের যুক্তি দেখিয়ে প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক আইনে এমন ‘রাজনৈতিক ব্যতিক্রম’ ক্রমশ কমিয়ে আনা হচ্ছে।
🩺 চোকসীর শরীরই কি সবচেয়ে বড় বাধা?
চোকসীর আইনজীবীরা তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে বিলম্ব ঘটাতে পারেন বলেই মনে করছেন হেগড়ে। যদি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়, তবে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে ফেরানো যাবে না। তবে এটাকে একেবারে প্রত্যর্পণ রুখে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে কার্যকর করা সম্ভব নয়।
⚖️ কেন বেলজিয়ামের অনুমতি প্রয়োজন?
চোকসী যেহেতু বেলজিয়ামে ধরা পড়েছেন, তাই বেলজিয়ামের আইন অনুযায়ীই বিচার চলবে। শুধু আদালতের অনুমতি নয়, আদালতের পর প্রশাসনিক স্তরেও সিদ্ধান্ত আসতে হবে। আর তাতেই সময় লেগে যেতে পারে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত।
📌 সারাংশ:
বিষয় | বিস্তারিত |
---|---|
কোথায় ধরা পড়েছেন | বেলজিয়াম |
এখন কোথায় বিচার হবে | বেলজিয়ামের আদালতে |
প্রধান বাধা | আইনি প্রক্রিয়া, শারীরিক অসুস্থতা, রাজনৈতিক যুক্তি |
প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা | এখনও অনিশ্চিত, তবে বন্ধ নয় |
✒️ উপসংহার:
চোকসী ধরা পড়ায় ভারত অনেকটা এগিয়েছে ঠিকই, তবে তাঁকে ফেরানো এখনও এক দীর্ঘ আইনি লড়াই। এখন তাকিয়ে থাকতে হবে বেলজিয়ামের আদালতের দিকেই—সেখানে জয় পেলেই কেবল ভারতের আদালতে বসবে চোকসীর বিচার।
মুর্শিদাবাদে ধীরে ধীরে স্বস্তির হাওয়া, ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ