খাদ্যের জন্য হাহাকার দেউলিয়া হওয়ার মুখে শতাধিক দেশ
বিশ্বজুড়ে আর্থিক সংকটের কালো ছায়া নেমে এসেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, শতাধিক দেশ অর্থনৈতিক দেউলিয়া হওয়ার দোরগোড়ায়। খাদ্য এবং জ্বালানির আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রাভাণ্ডারের সংকট, এবং ঋণের অস্বাভাবিক বোঝা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিশ্বের দেউলিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো
রাষ্ট্রপুঞ্জের উন্নয়ন কর্মসূচি বিভাগের প্রধান আচিম স্টেইনার জানিয়েছেন, যে কোনো সময় দুনিয়ার অন্তত ৫০টি রাষ্ট্রের কোষাগার শূন্য হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকায় রয়েছে ১০৪টি দেশের নাম। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পেরু, তিউনিশিয়া, লেবানন, আর্জেন্টিনা, কেনিয়া, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলো চরম সংকটে রয়েছে।
দেউলিয়া হওয়ার সংজ্ঞা
কোনো রাষ্ট্র তখনই দেউলিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়, যখন তার বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার ফুরিয়ে যায় অথবা নিজস্ব কোষাগারে কোনো অর্থ অবশিষ্ট থাকে না। এর ফলে দেশগুলিতে খাদ্য ও জ্বালানির সংকট তীব্র হয়ে ওঠে, স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যায়, এবং জনজীবনে নেমে আসে চরম অস্থিরতা।
দেউলিয়া হওয়ার কারণ
বিশ্বজুড়ে দেউলিয়া পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মূলত চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা:
- খাদ্যসঙ্কট:
জলবায়ু পরিবর্তন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খলে ভাঙন ধরিয়েছে। ইউক্রেন, যাকে ‘ইউরোপের রুটির ঝুড়ি’ বলা হয়, গম রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি আকাশছোঁয়া হয়েছে। - জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি:
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়া থেকে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। একই সঙ্গে ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক দেশ ইতোমধ্যেই তীব্র জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি। - অস্বাভাবিক ঋণের বোঝা:
বিশ্ব ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ১৩৫টি দেশ অত্যধিক ঋণের জালে জড়িয়ে আছে। টিউনিশিয়ার মতো দেশগুলির ঋণের পরিমাণ তাদের জিডিপি’র ১০০ শতাংশে পৌঁছেছে। - মুদ্রাস্ফীতি:
আর্জেন্টিনা এবং তুরস্কের মতো দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি যথাক্রমে ৬২% এবং ৭০%। অর্থনীতিবিদদের মতে, মুদ্রাস্ফীতি সাত শতাংশের ওপরে হলে একটি দেশ বড়সড় সংকটের মধ্যে পড়তে বাধ্য।
ভারতের অবস্থান
বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের এই তালিকায় ভারতের নাম না থাকলেও, দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যের ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। মহারাষ্ট্র এবং গুজরাত ছাড়া অধিকাংশ রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি সংকটময়। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তিত।
পরিণতি
দেউলিয়া হওয়া দেশগুলিতে সাধারণত খাদ্য ও জ্বালানির জন্য লড়াই শুরু হয়। আর্জেন্টিনা ও পেরুর মতো দেশে দেখা গেছে, খাদ্যের অভাবে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ। কিছু ক্ষেত্রে গৃহযুদ্ধেরও সূচনা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়েছে সেনা ও পুলিশ।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং দেউলিয়ার ঝুঁকি কমাতে রাষ্ট্রগুলিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলির খাদ্য এবং জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


