Monday, December 1, 2025

কৃত্রিম মেধার যুগে টিঁকে থাকার লড়াই! গুগলের ১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা

Share

কৃত্রিম মেধার যুগে টিঁকে থাকার লড়াই!

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম টেক জায়ান্ট গুগল (Google) ফের একবার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা করল। আর এবারের সিদ্ধান্তটা এমন এক সময়ে এসেছে যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রযুক্তির বিস্তার বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। গুগল জানিয়েছে, আগামী বছর শেষে সংস্থার ১০ শতাংশ কর্মী কমানো হবে। এই পদক্ষেপে বিশেষ করে ম্যানেজার পদমর্যাদার কর্মীরা প্রভাবিত হবেন।

গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই জানিয়ে দিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে সংস্থাটি নিজেকে আরও কার্যকরী এবং সক্ষম করে তুলতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের কাঠামোও সিম্পল করা হয়েছে, যাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় এবং দক্ষতা বাড়ানো যায়। কিন্তু যখন থেকে ওপেনএআই (OpenAI) এবং এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার টুল ‘চ্যাটজিপিটি’ (ChatGPT) বাজারে এসেছে, গুগল এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়েছে। ফলে তারা কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

গত কয়েক বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভূতপূর্ব উন্নতি এবং দ্রুততার সঙ্গে বাজারে ঢুকে পড়ার কারণে গুগলের মতো সংস্থাগুলোর জন্য প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। সুন্দর পিচাই এরই মধ্যে জানিয়েছেন যে, গুগলকে আর্থিকভাবে আরও শক্তিশালী এবং কার্যকরী করতে খরচ কমানোর দিকে তারা নজর দিয়েছে।

এবার মূলত ম্যানেজার, ডিরেক্টর এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদমর্যাদার কর্মীরা কর্মী ছাঁটাইয়ের শিকার হবেন বলে জানা গেছে। “বিজ়নেস ইনসাইডার” নামক একটি জনপ্রিয় রিপোর্টে বলা হয়েছে, গুগল তাদের কর্মী ছাঁটাইয়ের তালিকায় শুধু অযোগ্য কর্মীদেরই রাখবে না, বরং এমন কিছু কর্মীকেও বাদ দেওয়া হতে পারে, যাদের সংস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না থাকলে। তবে যারা সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের চাকরি বজায় থাকতে পারে।

গুগল কর্মীদের জন্য এই ছাঁটাই একেবারে নতুন নয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গুগলের সিইও পিচাই ঘোষণা করেছিলেন যে, সংস্থাকে আরও ২০ শতাংশ দক্ষ করতে হবে। তার পরেই ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গুগল ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল। এবারের ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত সেই আগের সিদ্ধান্তেরই একটি ধারাবাহিকতা বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ গুগল নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং খরচ কমানোর দিকে আরও মনোযোগী হয়েছে।

এই বছরের ছাঁটাইয়ের মূল কারণ হিসেবে কৃত্রিম মেধার প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ এবং তার প্রতিযোগিতার চাপকেই দায়ী করা হচ্ছে। ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি আজ বিশ্বব্যাপী এক বিপ্লব সৃষ্টি করেছে এবং এটি গুগলসহ অন্যান্য প্রযুক্তি সংস্থাকে চাপের মধ্যে ফেলেছে। ওপেনএআই-এর মতো সংস্থাগুলি যে নতুন নতুন কৃত্রিম মেধার টুল বাজারে আনছে, তার ফলে গুগলকে নিজেদের কার্যক্রম আরও সাশ্রয়ী ও আধুনিক করতে হচ্ছে, যাতে তারা এই প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ে।

এরই মধ্যে, মে মাসে গুগল কোর টিমের ২০০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করেছিল। একই সময়ে, বেশ কিছু বিভাগের ব্যাপক রদবদলও হয়েছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং টিম থেকে ৫০ জন কর্মী চাকরি হারান। ছয় মাসের মধ্যে আবারও কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে গুগলের এই সিদ্ধান্ত মূলত সংস্থার প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আরও শক্তিশালী করার জন্য।

গুগল এই সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে দেখছে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কার্যকারিতা এবং প্রযুক্তির দ্রুততার সঙ্গে তারা যেন মানিয়ে চলতে পারে, সে জন্য কর্মী ছাঁটাই একটি অপ্রতিরোধ্য পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, এই সিদ্ধান্তটি কর্মীদের মধ্যে হতাশা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করছে, যাদের জীবিকা এই পরিবর্তনগুলোর কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি সংস্থাগুলির মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রতিযোগিতা কেবল বাড়ছেই। এমন পরিস্থিতিতে, গুগলের মতো বড় সংস্থাগুলিকে নিজেদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা দ্রুত বদলাতে হচ্ছে, যাতে তারা নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে একত্রে চলতে পারে এবং পুরনো পদ্ধতিতে পিছিয়ে না পড়ে।

Read more

Local News