কালীঘাট মন্দিরে দর্শনার্থীর ভিড় নেই
এ বছরের কালীপুজোয় কালীঘাট মন্দিরের পরিবেশ ছিল বেশ ব্যতিক্রমী। অন্যবারের মতো ভক্তদের ভিড়ের বদলে, মন্দিরের সামনেই খালি বসেছিলেন ফুল ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকে বিক্রি আশানুরূপ না হওয়ায় অনেকে অপেক্ষা করছেন একটুখানি ভিড়ের আশায়। এক ফুল বিক্রেতা শুকনো মুখে বলছিলেন, “মালাগুলো বিক্রিই হচ্ছে না ঠিকমতো। কালীপুজোর দিনেও লোক নেই, ভাবতেই পারিনি।”
নিরাপত্তা আছে, কিন্তু আগ্রহী দর্শনার্থীর দেখা কম
মন্দিরের প্রবেশদ্বারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত হলেও, পুলিশকর্মীদের অধিকাংশকেই দেখা গেছে মোবাইলের দিকে নজর রেখে বসে থাকতে। বিভিন্ন গেটে থাকা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ ভক্তদের আসার হার ছিল নগণ্য। একজন প্রসাদ ব্যবসায়ী বলেন, “একই মাসে দুর্গাপুজো ও কালীপুজো পড়েছে, ফলে খরচের উপর চাপ পড়ে গেছে। তাই সকাল থেকেই যারা আসছেন, তারা শুধুমাত্র মায়ের দর্শন করেই চলে যাচ্ছেন, প্রসাদ নেওয়ার তেমন চাহিদা নেই।” দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যায় ভিড় কিছুটা বাড়লেও তা ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কম।
নির্মীয়মাণ স্কাইওয়াক ঘুরতে উৎসাহী মানুষ, প্রশ্নের ঢল দোকানিদের উপর
দর্শনার্থীদের যাদের দেখা মিলেছে, তাদের বেশিরভাগেরই আগ্রহ ছিল মন্দিরের চেয়ে সামনের স্কাইওয়াক নিয়ে। আশেপাশের দোকানিরা জানান, স্কাইওয়াক নিয়ে ভক্তদের কৌতূহল এতটাই যে কেউ কেউ তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন, কখন শেষ হবে বা কেমন লাগবে এটি পুরোপুরি শেষ হলে। দোকানিরা বলেন, “ব্যবসা আজ ভালো না হলেও স্কাইওয়াক নিয়ে কথা বলতে বলতেই দিন কেটে যাচ্ছে।” এক দোকানদার রসিকতা করে বলেন, “এবার তো স্কাইওয়াক নিজেই যেন একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে!”
ভিড় কম হওয়ার কারণ কি নির্মীয়মাণ স্কাইওয়াক?
বছর তিনেক আগে শুরু হওয়া স্কাইওয়াক নির্মাণের কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এর জন্য বিভিন্ন রাস্তায় জ্যাম, মন্দিরের সামনের রাস্তা খোড়াখুড়ি, এবং অন্যান্য কাজ চলতে থাকায় দর্শনার্থীদের যাতায়াত অত্যন্ত অসুবিধাজনক হয়ে পড়েছে। এক সেবায়েত বলেন, “এপ্রিল মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে শুনলাম সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হবে, আবার বলছে নভেম্বরে হবে। কিন্তু এখনও কাজের ২০ শতাংশ বাকি রয়েছে, যেটা আগামী মার্চ-এপ্রিলের আগে শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।”
মন্দিরের সেবায়েতদের অনেকে মনে করছেন, স্কাইওয়াক সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কালীঘাটে ভক্তদের ভিড় বাড়বে না। তারা জানান, “যদি কাজ শেষ হয়, তবে হয়তো মন্দিরে পুরনো রমরমা ফিরবে।”
এই নির্মীয়মাণ স্কাইওয়াক এবং চলমান ভাঙাচোরা পরিবেশের মাঝে কালীঘাট মন্দিরের পূজা উৎসব এবার যে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি, তা স্পষ্ট।


