Friday, November 7, 2025

কানপুরে হাসপাতালের মধ্যে নার্সকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে ডিরেক্টর গ্রেফতার

Share

কানপুরে হাসপাতালের মধ্যে নার্সকে

উত্তরপ্রদেশের কানপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত ২২ বছর বয়সি নার্সের উপর অত্যাচার ও ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় চলছে। অভিযোগের তীর হাসপাতালের ডিরেক্টরের দিকে, যিনি ওই নার্সকে রোববার রাতে তাঁর কক্ষে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই ডিরেক্টরকে গ্রেফতার করলেও, তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। এই ঘটনা নিয়ে শহরজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, বিশেষ করে হাসপাতালের মতো জায়গায় এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ায়।

নার্সকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ

জানা গিয়েছে, মাত্র দু’মাস আগে ওই নার্স এই হাসপাতালে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। রোববার রাতে হাসপাতালের একটি নৈশভোজ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাঁকে ডাকা হয়েছিল। সেই রাতেই নার্সকে হাসপাতালের ডিরেক্টর তাঁর কক্ষে ডেকে নিয়ে গিয়ে জোর করে আটকে রাখেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ওই কক্ষে ঢোকার পর ডিরেক্টর তাঁকে দরজা বন্ধ করে বন্দি করে ফেলেন। এরপর তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরপরই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা।

কানপুরের সহকারী পুলিশ কমিশনার অভিষেক পাণ্ডে জানান, নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, অভিযুক্ত ডিরেক্টর ওই নার্সকে ভয় দেখিয়েছিলেন যে, তিনি এই ঘটনা প্রকাশ করলে তাঁর জীবন সংশয় হতে পারে। এই কারণে নার্স প্রথমে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলার সাহস পাননি। তবে অবশেষে সাহসী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

শারীরিক পরীক্ষা ও তদন্তের অগ্রগতি

পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে এলে সেটি বিচারিক কাজে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি গ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে পুলিশ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীরা হতবাক এবং আতঙ্কিত। হাসপাতালের পরিবেশে নিরাপত্তার অভাব নিয়ে কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। নার্স ও অন্যান্য নারী কর্মীরা নিজস্ব নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন, বিশেষ করে এই ধরনের ঘটনা একাধিকবার ঘটার ফলে এই বিষয়টি আরো গুরুতর হয়ে উঠেছে।

কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন

এই ধরনের ঘটনা সাম্প্রতিক কালে ভারতে আরও কয়েকটি জায়গায় ঘটেছে, যা সমাজে গভীর আঘাত হেনেছে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুরক্ষা নিয়ে নানা সময়ে কথা উঠলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ। কিছুদিন আগেই কলকাতার আরজি কর হাসপাতালেও এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। সেই ঘটনার পরে হাসপাতাল ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি উঠে আসে। কানপুরের এই ঘটনাও সেই একই নিরাপত্তাহীনতার চিত্র তুলে ধরছে।

এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের উপরও প্রশ্ন উঠছে। হাসপাতালের মতো সংবেদনশীল জায়গায় এমন ঘটনা প্রতিরোধের জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপদ কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

এই ঘটনা শুধুমাত্র কানপুরের জন্য নয়, বরং গোটা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং নারীদের নিরাপত্তার প্রতি উদাসীনতারই প্রতিফলন। হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানে যেখানে মানুষের জীবন রক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা হয়, সেখানে এমন হিংস্র ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। নারীদের কর্মক্ষেত্রে এমন নিরাপত্তাহীন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেবল কড়া আইনই যথেষ্ট নয়, সেই সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সর্বোপরি, এই ঘটনায় নির্যাতিতার প্রতি সহানুভূতির সঙ্গে সমাজের নজর দেওয়া উচিত এবং একইসঙ্গে নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। নারীর নিরাপত্তা শুধুমাত্র আইনি পদক্ষেপ নয়, এটি সমাজের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার প্রতিফলন হওয়া উচিত।

Read more

Local News