Monday, November 10, 2025

কবি অরুণ চক্রবর্তী প্রয়াত: ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা’-র স্রষ্টার চলে যাওয়া

Share

কবি অরুণ চক্রবর্তী প্রয়াত

বাঙালি কবিতা এবং সংস্কৃতির এক অমর রচনা ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা’-র স্রষ্টা কবি অরুণ চক্রবর্তী আজ চিরতরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। শুক্রবার গভীর রাতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে চুঁচুড়ার ফার্ম সাইড রোডের বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

অরুণ চক্রবর্তী বাংলা কবিতার এক বিশিষ্ট নাম, যিনি শুধু সাহিত্য রচনা করেই থামেননি, বরং তাঁর রচনা লোকসংস্কৃতির এক বিশেষ প্রতিনিধিত্বও করেছে। ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা, রাঙা মাটির দেশে যা’ কবিতাটি শুধু একটি কবিতা ছিল না, এটি পরিণত হয়েছিল একটি গানে, যা দেশের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি এ গানটি বিদেশেও পরিচিতি লাভ করেছিল এবং শ্রোতাদের হৃদয়ে এক স্থায়ী অবস্থান তৈরি করে।

কবির জীবনের নানা দিক

অরুণ চক্রবর্তী শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর হিন্দুস্তান মোটরে চাকরি করতেন, তবে সাহিত্য তাঁর জীবনের অন্যতম প্রধান অবলম্বন ছিল। তিনি কখনোই একতরফা জীবন যাপন করেননি, বরং তাঁর কবিতাগুলিতে মানুষের অনুভূতি এবং সমাজের বাস্তবতা উঠে এসেছে। তিনি বহুদিন ধরে বাংলার বিভিন্ন জঙ্গল, পাহাড় এবং আদিবাসী এলাকায় ভ্রমণ করেছেন, সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতির প্রতি গভীর মনোযোগ দিয়েছিলেন। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে সাহিত্য রচনার এক বিশেষ দৃষ্টিকোণ দিয়েছিল।

‘লাল পাহাড়ির দেশে যা’ এবং এর গুরুত্ব

‘লাল পাহাড়ির দেশে যা’ কবিতাটি আক্ষরিক অর্থে শুধু একটি কবিতা নয়, এটি একটি আন্দোলন, একটি সংস্কৃতি এবং একটি চিন্তা-ধারা। এই কবিতাটি একদিকে যেমন বাঙালির সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে, তেমনি তা আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের জীবনের প্রতি সম্মানও জানায়। এই কবিতাটি এবং পরবর্তীতে গানটি হয়ে উঠেছিল লোকমুখে ফেরার একটি জনপ্রিয় ধারা।

কবির ব্যক্তিগত জীবন

অরুণ চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত জীবনও ছিল অত্যন্ত মিষ্টি এবং অসাধারণ। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি সুস্থ ছিলেন এবং গত শুক্রবার কলকাতার মোহরকুঞ্জে জঙ্গলমহল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে ঠান্ডা লেগে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং পরের দিন সকালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। তাঁর পুত্রবধূ সুদেষ্ণা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, করোনার পর থেকে কবির ফুসফুসে কিছু সমস্যা ছিল।

অরুণ চক্রবর্তী এক ধরনের মিষ্টি এবং আনন্দময় জীবনযাপন করতেন। তিনি স্যান্টাক্লজের মতো লাল পোশাক পরতেন, কাঁধে ঝোলা রাখতেন এবং ছোটদের চকোলেট দিতেন। তাঁর এই জীবনযাত্রা এবং অভ্যাস বহু মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল এবং তাঁকে সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয় করে তুলেছিল।

শোকপ্রকাশ ও শেষ শ্রদ্ধা

অরুণ চক্রবর্তীর মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের সদস্যরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। হুগলির কবি-সাহিত্যিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর দেহ চুঁচুড়ার বাড়ি থেকে রবীন্দ্র ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তাঁকে মুক্তমঞ্চে শায়িত রাখা হবে, এবং কবির গুণগ্রাহীরা সেখানে গিয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। পরে, তাঁর শেষকৃত্য শ্যামবাবুর ঘাটে সম্পন্ন হবে।

অরুণ চক্রবর্তী শুধু একজন কবি ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন। তাঁর রচনা এবং তাঁর জীবনযাত্রা আমাদের সমাজ এবং সংস্কৃতির প্রতি তাঁর ভালোবাসার এক নিদর্শন। ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা’ গানের সুরে তিনি আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন। আজ তাঁর মৃত্যু আমাদের সবার জন্য একটি বড় শূন্যতা তৈরি করল, তবে তাঁর সৃষ্টি এবং চিন্তা-ধারা চিরকাল আমাদের মনে বেঁচে থাকবে।

Read more

Local News