Saturday, June 14, 2025

উল্লাসের নামে বিভীষিকা: চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের রাতে প্যারিসে মৃত্যু, অগ্নিকাণ্ড, গ্রেফতার ৫০০-র বেশি

Share

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের রাতে প্যারিসে মৃত্যু

প্যারিস সঁ জারমাঁর (PSG) ইতিহাস গড়া প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের রাত, যা হওয়ার কথা ছিল আনন্দ আর গর্বের উৎসব—তা রূপ নিল এক বিভীষিকাময় তাণ্ডবে। মাঠের গণ্ডি পেরিয়ে উৎসব ছড়িয়ে পড়ে প্যারিসের রাস্তায়, আর সেখানেই তা নিয়ন্ত্রণ হারায়। বিজয়ের আনন্দ মুহূর্তেই পরিণত হয় হিংস্র উল্লাসে—যার ফল, প্রাণহানি, আগুন, লুটপাট, আর শত শত গ্রেফতার।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে প্রথম বারের মতো ইউরোপ সেরা হয় পিএসজি। প্যারিসজুড়ে শুরু হয় উৎসবের ঢল—কিন্তু সেই আনন্দের ঢেউ রাত যত বাড়ে, ততই ভয়াবহতায় রূপ নেয়। ১৭ বছরের এক কিশোর ছুরিকাঘাতে নিহত হয়, আর ২৩ বছরের এক স্কুটার আরোহী প্রাণ হারান গাড়ির ধাক্কায়। শহরের একাধিক এলাকায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় গাড়িতে, বাজি থেকে ছড়িয়ে পড়ে আগুন যাত্রী প্রতীক্ষালয়েও।

সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, রাতভর অশান্তিতে ১৯২ জন আহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৫৯ জনকে, যার মধ্যে ৪৯১ জন প্যারিস শহরেরই বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে ২২ জন পুলিশ এবং ৭ জন দমকলকর্মী রয়েছেন। শুধু আগুনেই পুড়েছে ২৬৪টি গাড়ি।

সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় আইকনিক শঁজে লিজ়ে অ্যাভিনিউ এবং পিএসজির স্টেডিয়াম পার্ক দ্য প্রাঁসের সামনে। সেখানে সমর্থকদের অনেকে পুলিশের দিকে বাজি ও বিভিন্ন বস্তু ছুঁড়ে মারেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পক্ষ থেকে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। নিরাপত্তার জন্য প্যারিসে মোতায়েন ছিল ৫৪০০ পুলিশ সদস্য, তবুও তারা এই সহিংস উল্লাস ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।

এই চিত্র নতুন নয়। পিএসজির আল্ট্রা সমর্থকদের আগ্রাসী মনোভাব আগেও দেখা গেছে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে। এমনকি এদের অনেকের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার অভিযোগও উঠেছে। শনিবার রাতের হিংস্রতায় যেন পুরনো স্মৃতি আবার ফিরে এল—তবে এবার নিজের শহরের বুকেই।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল জার্মানির মিউনিখে। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই শত শত পিএসজি সমর্থক মাঠে ঢুকে পড়েন, ছিঁড়ে নেন গোলপোস্টের জাল, মাঠের ঘাস, এমনকি মাটি পর্যন্ত। এত কড়া নিরাপত্তার মাঝেও সেই উন্মাদনা ঠেকানো যায়নি।

রবিবার পিএসজি দলের জন্য প্যারিসে আয়োজিত ভিক্টরি প্যারেডে ১০ হাজারের বেশি সমর্থকের জমায়েত হওয়ার কথা। সেখানে উপস্থিত থাকবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁও। তবে শনিবারের রক্তাক্ত উৎসবের পর নিরাপত্তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় প্রশ্ন।

একদিকে প্যারিস জ্বলছে সমর্থকদের উল্লাসে, অন্যদিকে শহরের অন্য প্রান্তে চলছে শান্ত সৌরভ—রোলা গাঁরজে তখনই ম্যাচ খেলছিলেন নোভাক জোকোভিচ। যেন একই শহরে দুই বিপরীত পৃথিবীর ছবি।

পিএসজির জয়ের আনন্দ, যা হওয়ার কথা ছিল ফরাসি ফুটবলের গর্ব, সেটাই এবার হিংসা, মৃত্যু ও ধ্বংসের কাহিনি হয়ে উঠল।

জামাইষষ্ঠীর ভোজেও অম্বল নয়! পুষ্টিবিদের টিপসেই থাকুন হালকা আর হাসিখুশি 💚

Read more

Local News