‘এফ-৩৫’ না পেয়ে আমেরিকার শত্রুদের সঙ্গে সখ্য বাড়াচ্ছে সৌদি আরব?
পশ্চিম এশিয়ার কূটনীতিতে নতুন এক মোড়। ‘বন্ধু’ আমেরিকার কাছ থেকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ না পেয়ে সৌদি আরব এখন বিকল্প সন্ধানে। এতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জগতে তৈরি হচ্ছে এক অস্থিরতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌদির এই পদক্ষেপ পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে এক বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে।
সৌদি-আমেরিকা: ঐতিহাসিক মিত্রতা
দু’দেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং শক্তিশালী। কিন্তু সাম্প্রতিককালে প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে এই সম্পর্ক চ্যালেঞ্জের মুখে। ২০১৭ সালে সৌদি আরব ‘এফ-৩৫’ কেনার প্রস্তাব দিলেও, আমেরিকা তা নিয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। সৌদির অভিযোগ, নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করছে ওয়াশিংটন।
কেন এই দ্বন্দ্ব?
এ বিষয়ে দুই প্রধান কারণ উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা:
- ইয়েমেন যুদ্ধ: সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে বিমানহানায় বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ‘এফ-৩৫’-এর মতো শক্তিশালী যুদ্ধবিমান ব্যবহার করলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
- ইজ়রায়েলের প্রতি আমেরিকার বিশেষ মনোভাব: ইজ়রায়েলের নিরাপত্তার প্রশ্নে আমেরিকা বরাবরই কঠোর। ইজ়রায়েলের হাতে থাকা অস্ত্র তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে দেওয়া হয় না।
বিকল্পের সন্ধান
‘এফ-৩৫’-এর বিকল্প হিসেবে সৌদি আরব চতুর্থ বা সাড়ে চার প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনার দিকে ঝুঁকছে। সম্ভাব্য অপশনগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ফরাসি ‘রাফাল’
- ‘ইউরোফাইটার টাইফুন’
তবে এই বিকল্পগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ‘রাফাল’-এর সরবরাহে সময়ক্ষেপণ হতে পারে। আর ‘ইউরোফাইটার’-এর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেশি।
রাশিয়া এবং চীনের ভূমিকা
বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশের হাতে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রয়েছে—আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীন। সৌদি আরব এখন রাশিয়ার ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’ বা চীনের ‘জে-২০ মাইটি ড্রাগন’ কেনার দিকে নজর দিতে পারে। তবে রাশিয়ার উপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের চুক্তি সৌদির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
তুরস্কের সাথে সম্ভাব্য চুক্তি
তুরস্কের তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের ‘কান’ স্টেলথ যুদ্ধবিমান সৌদির আগ্রহ আকর্ষণ করেছে। ইস্তানবুলে সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে। তুরস্কের ‘বের্যাকটার’ ড্রোন কেনারও পরিকল্পনা করছে সৌদি সরকার।
কী প্রভাব ফেলতে পারে এই পরিবর্তন?
- আমেরিকার সঙ্গে সৌদির সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হবে।
- পশ্চিম এশিয়ায় চীনের এবং রাশিয়ার প্রভাব বাড়বে।
- তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ।
সৌদির এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। এটি শুধু সৌদি-আমেরিকা সম্পর্ককেই নয়, বরং পুরো পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থাকেও বদলে দিতে পারে।


