Sunday, July 13, 2025

ইরানের বিদেশমন্ত্রীর দিল্লি সফর: ‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘিরে কি নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ?

Share

‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘিরে কি নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ?!

ভারত-পাক উত্তেজনার আবহে কূটনৈতিক আলোচনার এক নতুন অধ্যায় খুলতে চলেছে নয়াদিল্লিতে। বৃহস্পতিবার সকালে পাকিস্তান সফর সেরে ভারতে এসে পৌঁছেছেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি। এমন এক সময় তিনি দিল্লি এলেন, যখন ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জেরে উপমহাদেশ জুড়ে তীব্র উত্তেজনা। পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জবাবে ভারতের প্রত্যাঘাতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক মহলে নজর এখন দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতির উপর।

ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, আব্বাস দু’দিনের সফরে ভারত-ইরান যৌথ কমিশনের ২০তম বৈঠকে যৌথ-চেয়ারম্যান হিসেবে অংশ নেবেন। এ ছাড়াও, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন তিনি। বৈঠকে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

এই আবহে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে আব্বাসের ইসলামাবাদ সফর। সেখানেই তিনি জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইরান মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত এবং সে জন্য নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদে ইরানের দূতাবাসকে আলোচনার মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পহেলগাঁও হামলা এবং তার পরের ভারতীয় সামরিক অভিযানের সময় ইরানের এই ভূমিকা আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন বার্তা দেয়।

তেহরান এবং দিল্লির সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৫০ সালে স্বাক্ষরিত ‘ভারত-ইরান মৈত্রী চুক্তি’ আজও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে মজবুত ভিত হিসেবে কাজ করছে। এখন সেই সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে নতুন উদ্‌যাপন এবং কৌশলগত সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করার কথা ভাবছে ভারত। সূত্রের খবর, এই সফরে জয়শঙ্কর-আব্বাস বৈঠকে সে রকম পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি হতে পারে।

তবে এই সফরের সময় ও প্রেক্ষাপট একে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। কারণ, বর্তমানে ইরান ও আমেরিকার মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে উত্তেজনা চরমে। এমন অবস্থায় ইরানের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা প্রচার করলে তা ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক অসন্তোষ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। বিশেষত মার্কিন প্রশাসনের শুল্ক নীতির কড়া প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু এর পাশাপাশি, পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ইরানকে পাশে রাখা ভারতের কৌশলগত স্বার্থেও পড়ে।

ভারত চায়, দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে প্রতিবেশীদেরও পাশে পেতে। ইরানের মতো দেশ, যারা নিজেদেরও সন্ত্রাসবাদের শিকার বলে দাবি করে, সেই দেশকে পাশে পাওয়া ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে বড় শক্তি হতে পারে।

এই সফর এবং আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যদি ‘অপারেশন সিঁদুর’ উঠে আসে, তা হলে এটাই হতে পারে সেই কূটনৈতিক ব্যাখ্যা, যেখানে যুদ্ধ ও শান্তির মাঝে নতুন বার্তা দেবে নয়াদিল্লি ও তেহরান।

আপনার মনে হয় এই সফর ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে শক্ত করবে?

অপারেশন সিঁদুর: ভারতীয় প্রতিআক্রমণে মাসুদ আজ়হারের বোন-সহ পরিবারের ১০ জন নিহত

Read more

Local News