আরসিবি-র বিজয় উৎসব পরিণত হল ট্র্যাজেডিতে— বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনারকে সাসপেন্ড করলেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া
আরসিবি-র আইপিএল জয়ের পর শহরজুড়ে যখন উল্লাসের জোয়ার, তখনই ঘটে গেল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে বিজয়োৎসব দেখতে আসা মানুষের ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এই মর্মান্তিক ঘটনার দায় স্বীকার করে কঠোর পদক্ষেপ করলেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া— সাসপেন্ড করা হল বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার-সহ একাধিক শীর্ষ আধিকারিককে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনী সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সাসপেন্ড করা হয়েছে কব্বন পার্ক থানার ইনস্পেক্টর, স্টেশন হাউস অফিসার, সেন্ট্রাল ডিভিশনের ডিসিপি, সহকারী পুলিশ কমিশনার এবং স্টেডিয়াম ইনচার্জকে। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কাউকেই রেয়াত করা হবে না। আরসিবি, কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (কেএসসিএ) এবং ইভেন্ট ম্যানেজার সংস্থা ডিএনএ-র কর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি তাঁদের গ্রেফতারও করা হতে পারে বলে জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, এই ঘটনার তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত এক হাই কোর্ট বিচারপতির নেতৃত্বে এক সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যেই সেই কমিশন সরকারের কাছে রিপোর্ট দেবে। একই সঙ্গে কর্নাটক হাই কোর্ট স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে মামলার শুনানি শুরু করেছে। কর্নাটক সরকার আদালতে জানায়, সিআইডি-র অধীনে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তৈরি করে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বেঙ্গালুরুর কব্বন পার্ক থানায় ইতিমধ্যেই মামলা রুজু হয়েছে। সেখানে আরসিবি এবং কেএসসিএ-র বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনা সামনে আসতেই নেটমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ এবং আয়োজক সংস্থাগুলি। বিশেষ করে প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে এমন বড় একটি আয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি? কেন আগে থেকে জনসমাগমের আশঙ্কা করে নিরাপত্তা বলয় বাড়ানো হয়নি?
সেই দিন ছিল কর্নাটকবাসীর কাছে আনন্দের দিন। ১৭ বছরের অপেক্ষার পরে প্রথমবার আইপিএল ট্রফি জিতেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। সেই উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল শহরজুড়ে বিজয় মিছিল এবং সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে আরসিবি-র অন্যান্য তারকা ক্রিকেটারদের একঝলক দেখতে ভিড় জমায় হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু সেই উৎসবই মুহূর্তে পরিণত হয় ভয়ংকর এক বিপর্যয়ে।
সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তও চলবে। কিন্তু মূল প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে— কীভাবে এত বড় নিরাপত্তার ফাঁক থেকে গেল? সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই এ বার রাজ্যের প্রশাসনিক স্তরে শুরু হল কড়া পদক্ষেপ।
এই ঘটনা ফের প্রমাণ করল, ক্রিকেট যতই আবেগ হোক না কেন, নিরাপত্তার ব্যর্থতা এক মুহূর্তেই আনন্দকে বিষাদে পরিণত করতে পারে। আর সেই দায় চাপানো হলো বেঙ্গালুরুর শীর্ষ পুলিশকর্তাদের ঘাড়ে।