Monday, December 1, 2025

আমেরিকার ঋণের চাপে দেউলিয়ার আশঙ্কা: মাস্কের ভবিষ্যদ্বাণী ও সঞ্চয়ের টিপস

Share

আমেরিকার ঋণের চাপে দেউলিয়ার আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ঋণের পরিমাণ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এমনই যে, এটি দেউলিয়া হওয়ার পথে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। সম্প্রতি এক পডকাস্টে তিনি এই বিষয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেছেন এবং আমজনতার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সঞ্চয় পরামর্শ দিয়েছেন।

ঋণের বোঝা কতটা গুরুতর?

ইলন মাস্কের মতে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমেরিকার মোট জাতীয় ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ লক্ষ কোটি ডলার। এর মধ্যে চলতি বছরে দু’লক্ষ কোটি ডলার ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঋণ ও রাজস্বের পরিসংখ্যান

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমেরিকার রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি ডলার। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি ডলার খরচ হয়েছে শুধুমাত্র ঋণের সুদ মেটাতে। অর্থাৎ, মোট রাজস্বের ২৩ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে সুদ মেটানোর জন্য।

ঋণের সঙ্গে জিডিপির সম্পর্ক

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ দেশটির মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি)-এর ১২৫ শতাংশ। আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দিনে এই অনুপাত ২০০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। এর মানে, ঋণের পরিমাণ দেশের অর্থনীতির দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।

ঋণ বৃদ্ধির কারণ

জাতীয় ঋণের বৃদ্ধি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে ঘটেছে:

  1. কোভিড-১৯ অতিমারি: ২০২০ সালে মহামারি শুরু হওয়ার পর আমেরিকার অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি সামলাতে সরকার একের পর এক ঋণ নিয়েছে।
  2. সামরিক ব্যয়: ইউক্রেন ও তাইওয়ানের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ইলন মাস্ক এর জন্য বর্তমান প্রশাসনকে দায়ী করেছেন।
  3. বৈদেশিক বিনিয়োগ: আমেরিকার ট্রেজারি বন্ডের বেশিরভাগ কিনেছে চীন, যা দেশটির অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য হুমকি।

সঞ্চয়ের টিপস

মুদ্রাস্ফীতির এই পরিস্থিতিতে ইলন মাস্ক আমেরিকানদের তিনটি খাতে সঞ্চয় করতে বলেছেন:

  1. রিয়েল এস্টেট: সম্পত্তিতে বিনিয়োগ মুদ্রাস্ফীতির সময় একটি নিরাপদ বিকল্প।
  2. সোনা: সোনা দীর্ঘমেয়াদে একটি স্থিতিশীল সম্পদ।
  3. উন্নয়নশীল কোম্পানির শেয়ার: এমন কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ করতে বলেছেন, যাদের পণ্যের মূল্য ভবিষ্যতে বাড়বে।

প্রশাসনিক উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শপথ নিতে যাচ্ছেন। তার অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হবে জাতীয় ঋণ কমানো। এর জন্য তিনি সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং অপ্রয়োজনীয় বিভাগগুলিকে চিহ্নিত করার পরিকল্পনা করছেন।

ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ নামক একটি দফতর গঠনের ঘোষণা করেছেন। এর নেতৃত্বে থাকবেন ইলন মাস্ক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত রিপাবলিকান নেতা বিবেক রামস্বামী। এই দফতরের কাজ হবে অযোগ্য সরকারি কর্মচারী এবং বিভাগগুলিকে সনাক্ত করে প্রশাসন থেকে অপসারণ করা।

কর ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক

মাস্ক কর বৃদ্ধির পক্ষে, যেখানে ট্রাম্প আয়কর কমানোর পরিকল্পনা করেছেন। মাস্কের মতে, রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য কর বাড়ানো জরুরি। একইসঙ্গে, প্রতিরক্ষা খাতে খরচ কমানোরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

উপসংহার

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ইলন মাস্কের সতর্কবার্তা এই বিষয়ে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। তার পরামর্শ এবং প্রশাসনিক উদ্যোগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কতটা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Read more

Local News