Monday, November 10, 2025

আন্দামানে চক্রের ষড়যন্ত্র: ৩৬ হাজার কোটির মেথ উদ্ধারে নতুন সংকট

Share

আন্দামানে চক্রের ষড়যন্ত্র

আন্দামান সাগরে ৩৬ হাজার কোটি টাকার মেথামফেটামিন (মিথ) উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের এই কার্যকলাপে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মাদক পাচারকারীরা এবার পাঞ্জাব ও কাশ্মীর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।

আন্দামান সাগরে অপারেশন এবং মাদক উদ্ধার

নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে, আন্দামান সাগরে একটি মাছ ধরার ট্রলারের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায়, উপকূলরক্ষী বাহিনী তা তৎক্ষণাৎ নজরে রাখে। ডর্নিয়ার বিমানের মাধ্যমে ট্রলারের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। পরে, স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় ট্রলারটি আটক করা হয়। এতে ছয় হাজার কেজি মেথামফেটামিন বাজেয়াপ্ত করা হয়, যার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ট্রলারে থাকা ছয়জন মায়ানমারের নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা থাইল্যান্ডে মাদক পাচারের পরিকল্পনা করছিল।

মাদক করিডোর তৈরির পরিকল্পনা

তদন্তে উঠে এসেছে যে, মাদক পাচারের নেপথ্যে পাকিস্তান ও চিনের ষড়যন্ত্র রয়েছে। আন্দামান-নিকোবর, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুকে ‘ড্রাগ হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। বঙ্গোপসাগরকে নতুন মাদক করিডোর হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে মাদক চক্র। কোকেন বা হেরোইনের পরিবর্তে, মেথামফেটামিন পাচারের দিকে মনোনিবেশ করা হচ্ছে। এটি একটি সিন্থেটিক ড্রাগ, যা অল্প জায়গায় তৈরি করা সম্ভব এবং সহজে পাচারযোগ্য।

আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের যোগসূত্র

উদ্ধার হওয়া মাদকের সর্বাধিক চাহিদা রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে, যেখানে এর দাম প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা যোগাযোগের জন্য স্যাটেলাইট ফোন এবং স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট ব্যবহার করছিল। আন্দামান সাগরের এই মাদক চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাদক দুনিয়ার দুই প্রধান গ্যাং, মেক্সিকোর ‘জেলিস্কো নিউ জেনারেশন’ এবং চিনের ‘এল চাপো’-র যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর প্রভাব

তদন্তে জানা গেছে, মাদক পাচারের জন্য রোহিঙ্গাদের নৌকা এবং মায়ানমারের চোরাশিকারিদের জলযান ব্যবহার করা হচ্ছে। আন্দামানকে কেন্দ্র করে মাদক চক্রের এমন সক্রিয়তার কারণে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। মাদকের সঙ্গে অস্ত্র পাচারের যোগসূত্রের কথাও সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদক প্রবাহ বাড়লে ওই এলাকা সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটিতে পরিণত হতে পারে।

দক্ষিণ ভারতে মাদক সাম্রাজ্য বিস্তার

উত্তর ভারতে বিশেষত পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং গুজরাতে মাদক চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে, পাচারকারীরা এখন দক্ষিণ ভারতের দিকে নজর দিচ্ছে। শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীদের মাধ্যমে তামিলনাড়ুতে মাদক পাচারের চেষ্টা চলছে। সেখান থেকে মাদক কেরল ও কর্নাটক হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

কেন মেথামফেটামিন এত বিপজ্জনক

মেথামফেটামিন সম্পূর্ণভাবে একটি সিন্থেটিক ড্রাগ। এটি অত্যন্ত আসক্তিকর এবং একবার এর নেশা ধরলে তা থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। এই মাদক তৈরিতে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। মাত্র ১০০ বর্গফুট জায়গায় টন টন মাদক উৎপাদন করা সম্ভব। ফলে মাদক চক্রের জন্য এটি একটি লাভজনক ব্যবসা।

উপসংহার

আন্দামান সাগরে এই বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের ঘটনা ভারতের জন্য একটি সতর্কবার্তা। মাদক চক্রের নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলা এখন সময়ের দাবি। নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে আরও সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে, যাতে মাদক এবং অস্ত্র পাচারের মতো কর্মকাণ্ড ভারতের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

Read more

Local News