Sunday, May 18, 2025

আজও রচিত হচ্ছে ‘নতুন রবীন্দ্রসঙ্গীত’! কারা গায়, কারা শোনে?

Share

আজও রচিত হচ্ছে ‘নতুন রবীন্দ্রসঙ্গীত’!

এটা কি সত্যিই নতুন ধরনের রবীন্দ্রসঙ্গীত? গত বছর কিছু সঙ্গীতপ্রেমী সমাজমাধ্যমের সাহায্যে ‘নতুন রবীন্দ্রসঙ্গীত’-এর ধারা সৃষ্টি করেছেন, যা দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। আপনি হয়তো জানেন ‘নতুন বাজার’ বা ‘নতুন বৌ’-এর মতো শব্দবন্ধ, কিন্তু ‘নতুন রবীন্দ্রসঙ্গীত’ কেন যেন কিছুটা অদ্ভুত, অস্বাভাবিক মনে হয়। তাহলে, এই ‘নতুন রবীন্দ্রসঙ্গীত’ আসলে কী?

আজকাল সুরকার এবং গায়করা যখন রবীন্দ্রনাথের গান অনুকরণ করে গান রচনা করছেন, তখন অনেকেই জানাচ্ছেন যে, এটি আসলে রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়। কিন্তু কেন? সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে এমন গানের পোস্ট প্রচুর দেখা গেছে, যেমন ‘আমার আঁধার ঘরের প্রদীপ’, ‘আমার ভিতর বাহিরে’, ‘আমি বাংলায় গান গাই’ ইত্যাদি। এসব গানকে ‘নতুন রবীন্দ্রসঙ্গীত’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, এবং অনেকেই তা নিয়ে তর্ক করছেন। সমাজমাধ্যমে এই বিতর্ক নতুন কিছু নয়, কিন্তু কেন এই গানগুলোকে রবীন্দ্রসঙ্গীত বলা হচ্ছে?

গানের সুর ও বাণীতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ছোঁয়া থাকলেই কি তা সত্যিই রবীন্দ্রসঙ্গীত হয়ে ওঠে? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই বলছেন, সুর এবং বাণী মিলিয়ে এসব গান রবীন্দ্রসঙ্গীতের আদল পেয়েছে। তবে, ‘আমার ভিতর বাহিরে’ বা ‘আমি বাংলায় গান গাই’-এর মতো গান কি সত্যিই রবীন্দ্রসঙ্গীতের আদলে তৈরি? কিছুটা ভাবলে মনে হতে পারে, এসব গান সুরের ধাঁচে রবীন্দ্রসঙ্গীতের আদল রেখেছে, কিন্তু তার মধ্যে ঠিক সেই পরিসীলিত ছাপ নেই যা রবীন্দ্রনাথের গানে থাকে।

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিশেষত প্রান্তিক শ্রেণির মধ্যেই এই নতুন রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে এটা কেবল ‘প্রান্তজন’-দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সম্প্রতি এক জনপ্রিয় অভিনেত্রীও রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে ‘আমার ভিতর বাহিরে’ পোস্ট করেছিলেন, যদিও সে পোস্টে একাধিক বানান ভুল ছিল। এর পরপরই তাকে নিয়ে অনেকেই কটাক্ষ করেন।

রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি এই অদ্ভুত প্রবণতা কেন? সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র এবং গায়ক প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, রবীন্দ্রনাথের গান মানুষের মধ্যে গভীরভাবে জায়গা করে নিয়েছে। সে কারণে সুরকাররা প্রায়ই তাঁর সুরের অনুকরণে গান সৃষ্টি করেন। দেবজ্যোতি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, তাই তার সুরের ছোঁয়া বহন করতে গিয়ে কিছু নতুন গান তৈরি হয়।”

এদিকে, শ্রাবণী সেনের মতে, রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুসারী গানগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে কারণ শ্রোতারা সেগুলিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ছোঁয়া খুঁজে পাচ্ছেন। তবে, প্রবুদ্ধ মনে করেন, রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঠিক ব্যাখ্যা না জানা অনেক মানুষের অজ্ঞতার কারণে এই গানের বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

অথচ, গান যদি রবীন্দ্রনাথের সুর বা বাণী অনুসরণ করে তৈরি হয়, তা হলে কেন তা রবীন্দ্রসঙ্গীত হিসেবে গণ্য হবে না? রবীন্দ্রনাথ নিজের সৃষ্টিকর্মের ভবিষ্যত নিয়ে যেমন আশাবাদী ছিলেন, তেমনি তাঁর গানও বাঙালির মনোভাবের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত হয়ে থাকবে।

সুতরাং, নতুন গান তৈরি হলে তার মধ্যে যদি রবীন্দ্রনাথের সুরের কোনও ছায়া থাকে, তাতে দোষ কোথায়? এটা বোঝা শ্রোতার দায়িত্ব। তবে, যদি কেউ এসব গানকে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত’ বলে দাবি করেন, তবে তার পেছনে এক ধরনের ‘অশিক্ষা’ কাজ করছে। আর এই অশিক্ষার কারণেই অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে, রবীন্দ্রসঙ্গীত যদি আজও মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়, তবে কেন তাকে নতুন সুরে রচনা করা হচ্ছে? সময়ের সঙ্গে এসব গানকে আরও পরিশীলিতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, এবং সেগুলো বাঙালি সমাজে এখনও বহাল রয়েছে। তবে একে ‘ভৌতিক’ রবীন্দ্রসঙ্গীত হিসেবে ভাবা হচ্ছে, যা সমাজমাধ্যমে এক নতুন আলোড়ন তৈরি করছে।

‘ব্রহ্মস’ নয়, কেন ‘হাতুড়ি’র ঘা? অপারেশন ‘সিঁদুর’-এ ভারত বেছে নিল স্ক্যাল্প ও হ্যামার, কারণ জানেন?

Read more

Local News