Tuesday, November 11, 2025

আচমকা অসুস্থতায় একা রোগীকে শারীরিক সমস্যা জানাতে যন্ত্র উদ্ভাবন যাদবপুরের

Share

শারীরিক সমস্যা জানাতে যন্ত্র উদ্ভাবন যাদবপুরের

কখনও কখনও বাড়িতে হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন, কিন্তু তখন কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য উপস্থিত থাকেন না। এমন পরিস্থিতিতে রোগী নিজে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারবেন না, কিংবা তেমন সময়ও পাওয়া যায় না। ফলস্বরূপ, শারীরিক অবস্থা দ্রুত সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে। এই সমস্যার সমাধান হতে পারে একটি নতুন প্রযুক্তি, যা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁদের উদ্ভাবিত যন্ত্রটি, যা ‘ইন্টেলিজেন্ট সিকিউর হেলথ মনিটরিং ডিভাইস-২৪’ (আইএসএইচএমডি-২৪) নামে পরিচিত, রোগীকে তার শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য জানাতে সহায়তা করবে, বিশেষ করে একা অবস্থায়।

এই যন্ত্রটির কার্যক্ষমতা অত্যন্ত সহজ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব। গবেষকদের দাবি, এই যন্ত্রটি একটি ঘড়ির মতো কব্জিতে পরা যাবে এবং তা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করবে, যেমন হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, তাপমাত্রা এবং নাড়ির গতি। যখন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, তখন এই যন্ত্রটি ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেবে যে, তার শরীরে ঠিক কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এই তথ্য একে একে ক্যাপচার করে চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হবে, যাতে তাঁরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।

গবেষক সায়ন ত্রিপাঠী এবং ঝিলম জানার দাবি, মেশিন লার্নিং পদ্ধতির মাধ্যমে যন্ত্রটি বিশ্লেষণ করবে এবং আমেরিকান হেলথ অ্যাসোসিয়েশন থেকে নির্দিষ্ট প্যারামিটার অনুসারে রোগীর শারীরিক সমস্যা সনাক্ত করবে। এছাড়াও, এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে তথ্য পাঠিয়ে দেবে। এর জন্য একটি অ্যাপও তৈরি করা হয়েছে, যেখানে চিকিৎসকদের তালিকা থাকবে এবং অ্যাপে দেখানো হবে কোন চিকিৎসক বর্তমানে উপলব্ধ আছেন। রোগী তখন সেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে।

এই যন্ত্রের উদ্ভাবন বিশেষত গ্রামাঞ্চলে অত্যন্ত কার্যকরী হবে, যেখানে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য এটি একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে, যেখানে অনেক সময় চিকিৎসকের অভাব দেখা যায় এবং রোগীদের কাছে সঠিক চিকিৎসা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। গবেষক সায়ন ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘আমরা মূলত গ্রামাঞ্চলের সমস্যাগুলো মাথায় রেখে এই যন্ত্রটি তৈরি করেছি। বর্তমানে আমরা এর স্বত্ব পেয়ে গেছি এবং শিগগিরই এটি বাজারে ন্যানো ওয়াচ মডেলের আদলে আসবে, যার দাম হবে প্রায় তিন হাজার টাকা।’’

এই যন্ত্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী। সায়ন জানান, রোগী এবং চিকিৎসকের মধ্যে শুধুমাত্র সেই তথ্য শেয়ার করা হবে। তৃতীয় কোনো পক্ষ সেই তথ্য জানতে পারবে না। যন্ত্রটি ব্যবহারের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং তারপরই সেটি ব্যবহারকারী হিসেবে সক্রিয় হবে।

গবেষণার মূল দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষক জয়দেব ভৌমিক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সায়ন ত্রিপাঠী ও ঝিলম জানা, এবং সহায়তায় ছিলেন শিক্ষক চিন্ময় ঘড়াই এবং গবেষক আসফাক আলি। গবেষণার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল ইনোভেশন কাউন্সিল।

এই প্রযুক্তি আবিষ্কারের মাধ্যমে শুধু যে রোগীদের চিকিৎসা পাওয়া সহজ হবে, তা নয়, এটি চিকিৎসা ব্যবস্থায় নতুন একটি যুগের সূচনা করবে।

Read more

Local News