অপারেশন সিঁদুর!
পাকিস্তানের জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম) প্রধান মৌলানা মাসুদ আজ়হারের পরিবারে শোকের ছায়া। ভারতীয় সেনার সাম্প্রতিক এক সফল প্রতিআক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন তার পরিবারের ১০ সদস্য। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আজ়হারের নিজের বোন এবং ভগিনীপতিও। এই অভিযানকে ভারতীয় সেনা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিহিত করেছে। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শহর বহওয়ালপুর, যাকে জইশের শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করা হয়।
ভারতের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত ২১টি জঙ্গি ঘাঁটিতে। একযোগে এই হামলা শুরু হয় মঙ্গলবার গভীর রাতে, রাত ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে। মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায় একের পর এক ঘাঁটি। বহওয়ালপুর শহরেই অবস্থিত ‘জামিয়া মসজিদ শুভান আল্লাহ্’ ক্যাম্পাস, যেখানে রয়েছে জইশের সদর দফতর, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং আজ়হারের নিজস্ব বাসস্থানও।
এই ভয়াবহ হামলার পরে এক বিবৃতিতে মাসুদ আজ়হার স্বীকার করেন, ভারতীয় হামলায় তার পরিবারের ১০ জন মারা গিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এ নিয়ে তার কোনও অনুশোচনা নেই। যদিও পাকিস্তানের কিছু সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, নিহতের সংখ্যা ১৪। এদের সবাই নাকি মাসুদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
এই ঘটনার পর থেকেই উঠছে বড় প্রশ্ন— মাসুদ আজ়হার কি তবে মারা গিয়েছেন? দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছেন। জাতিসংঘও তাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জইশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা আজ়হারের বিরুদ্ধে রয়েছে ভারতের বহু সন্ত্রাসবাদী হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ— ২০০১ সালের সংসদ হামলা, ২০১৬ সালের পঠানকোট হামলা কিংবা ২০১৯ সালের ভয়াবহ পুলওয়ামা কাণ্ড— সবেতেই ছিল জইশের নাম।
২০০২ সালে পাকিস্তানে জইশ নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবে সেই সংগঠন বহাল তবিয়তেই কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ২০২৪ সালের শেষদিকে আবারও বহওয়ালপুরে মাসুদ আজ়হারের উপস্থিতি নজরে আসে ভারতীয় গোয়েন্দাদের। ধারণা করা হয়, সেখানেই বসে সে নতুন করে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার ছক কষছিল। সেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই সম্ভবত ভারত এই পরিকল্পিত হামলা চালায়।
তবে এই প্রতিআক্রমণে মাসুদ আজ়হার নিজে নিহত হয়েছেন কি না, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। পাকিস্তান সরকার বা সেনার পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে কোনও স্পষ্ট বার্তা আসেনি। ফলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— এই ভয়াবহ আঘাতের পর মাসুদ আজ়হার কোথায়? আদৌ সে বেঁচে আছে কি না, তা সময়ই বলবে।
এই অভিযান কেবল ভারতের প্রতিরক্ষার সাফল্য নয়, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে এক বড় বার্তাও বয়ে এনেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।