Monday, December 8, 2025

‘অপরাধীদের কিছু হল না, সাজা হল শুধু আমাদের’

Share

অপরাধীদের কিছু হল না

দত্তপুকুরের মোচপোল থেকে দূরত্বে নারায়ণপুর এলাকা যেতেই চোখে পড়ে অবৈধ বাজি ব্যবসার প্রভাব। রাস্তার পাশে ‘বৈধ’ বাজির দোকান সাজানো, কিন্তু ভিতরে ঢুকলে দ্রুত চলে আসে ‘স্যাম্পল’। এই দৃশ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় গত বছর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের কথা, যা এখনও মানুষের মনে ভয়ের ছাপ রেখে গেছে।

বছরখানেক আগে দত্তপুকুরের মোচপোলে ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল নয়জনের। ঘটনার পর স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, এখনও সেখানকার বাস্তবতা বদলাতে পারেনি। এলাকার বাড়িগুলো মেরামত করা হলেও, বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এখনও মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে। ঘটনার পর যদিও কিছুদিন বেআইনি বাজির কারবার বন্ধ ছিল, কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। এখন নারায়ণপুরে ফিরে এসেছে সেই পুরনো দৃশ্যপট।

গত শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশকে সতর্ক করে বলেছিলেন, আতশবাজির আড়ালে ‘দুষ্টু লোকেরা’ যাতে নিষিদ্ধ বাজির ব্যবসা চালাতে না পারে, তার দিকে নজর রাখতে। তবে তার আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা বাস্তবতা বলে দিচ্ছে। নারায়ণপুরে একদিন ঘুরতে গিয়ে দেখা গেল, দোকানগুলোতে লোকজনের ভিড়। কেউ দোকান সাজাচ্ছে, কেউ খদ্দের ধরতে ব্যস্ত।

সেখানে গিয়েই আমাকে ধরে দোকানে বসালেন নাজিবুল হোসেন নামের একজন যুবক। তার কথায়, “আপনাদের যা লাগবে, সব কিছুই পাবেন। এমন আওয়াজ হবে, পাশের পাড়ার লোকজন কাঁপবে।” এরপরই সে শুরু করে চকলেট থেকে নিষিদ্ধ শব্দবাজির ‘স্যাম্পল’ দেখাতে। নিজেদের তৈরি বলেও দাবি করে। পাশের দোকানে একই দৃশ্য দেখা যায়, এবং অধিক পরিমাণ কিনলে পুলিশের ঝামেলা ‘দেখে নেওয়ার’ প্রতিশ্রুতিও দেয় তারা।

স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, গত বছর অগস্টে মোচপোলে বিস্ফোরণের পর বেআইনি বাজির কারবার কিছুদিন বন্ধ ছিল। তখনকার বেশিরভাগ বাজির কারবারিরা এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই তারা ফিরে এসেছে। এখন আবার নারায়ণপুরে বেআইনি বাজির ডালপালা বাড়ছে। মোচপোলের ঘটনাটি যেন অতীতের মতই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

মোচপোলের বিস্ফোরণে বেঁচে গিয়েছেন আসুরা বিবি, কিন্তু তার জীবন যে আর আগের মতো নেই, তা স্পষ্ট। তাঁর দোতলা বাড়ির একাংশ উড়ে গেছে, আর তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বারবার অস্ত্রোপচার হলেও এখনও শ্রবণশক্তি ফিরে পাননি। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “অপরাধীদের কিছু হল না, সাজা হল শুধু আমাদের। পুলিশ কিছুদিন দৌড়োদৌড়ি করল, তারপর সব চুপ।”

বারাসত পুলিশের কর্তারা যদিও চুপ থাকার কথা অস্বীকার করছেন। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “বেআইনি বাজির কারবার রুখতে বিশেষ দল রয়েছে। ওই এলাকায় প্রতিদিন পুলিশের টহল রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য এই কারবার যাতে চলতে না পারে।”

যদিও পুলিশের দাবি রয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অস্বস্তি ও উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। নারায়ণপুরে বেআইনি বাজির ব্যবসা যে আবার গড়ে উঠছে, সেটি তাদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। প্রশাসন ও পুলিশের কাছে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা উচিত, যাতে আগের মতো আর কোনো বিপর্যয় না ঘটে। সবার আগে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং বেআইনি বাজির ব্যবসা রুখে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

4o mini

Read more

Local News