দন্তচিকিৎসকদের সতর্কবার্তা
শৈশব থেকেই আমরা শুনে আসছি — “চকোলেট খেলে দাঁতে পোকা ধরবে।” কিন্তু কখনও কি শুনেছেন, বিস্কুটও দাঁতের জন্য ভয়ংকর হতে পারে? আশ্চর্যের হলেও সত্যি, দন্তচিকিৎসকদের মতে চকোলেটের থেকেও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে গ্লুকোজ় বিস্কুট। কারণ এগুলি শুধু চিনি-সমৃদ্ধই নয়, দাঁতে দীর্ঘ সময় লেগে থেকে ব্যাক্টেরিয়া তৈরি করে দাঁতের ক্ষয় ডেকে আনে।
সম্প্রতি শাহরুখ খান ও হৃতিক রোশনের দন্তচিকিৎসক সন্দীপ মায়েকর জানিয়েছেন, দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য গ্লুকোজ় বিস্কুটই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। তিনি বলেন, “চকোলেট মুখে গলে যায় এবং দ্রুত সরে যায়। কিন্তু গ্লুকোজ় বিস্কুট আঠার মতো দাঁতে লেগে থাকে। এই আঠালো অংশ ব্যাক্টেরিয়ার জন্ম দেয় এবং সেই ব্যাক্টেরিয়া অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে, যা দাঁতের আবরণ নষ্ট করে দেয়। ফলে সহজেই ক্যাভিটি তৈরি হয়।”
কলকাতার দন্তচিকিৎসক ময়ূখ রায়ও সন্দীপের সঙ্গে একমত। তাঁর কথায়, গ্লুকোজ় বিস্কুট দাঁতের ফাঁকফোকর ও মাড়ির পাশে আটকে থেকে মুখের ব্যাক্টেরিয়া দ্রুত অ্যাসিড তৈরি করতে সাহায্য করে। সময়ের সঙ্গে দাঁতের আবরণ ক্ষয়ে গিয়ে গর্ত বা ক্ষয়ের সৃষ্টি হয়। অন্য দিকে, ডার্ক চকোলেট তুলনামূলক কম ক্ষতিকর, কারণ এতে চিনির পরিমাণ কম এবং এমন উপাদান থাকে যা দাঁতের জীবাণু কমাতে সাহায্য করে।
ময়ূখ আরও ব্যাখ্যা করেন, দাঁতে ক্ষয় হওয়ার পিছনে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ — সারফেস (দাঁত), সাবস্ট্যান্স (খাদ্য) এবং সময়। যখন দাঁতের পৃষ্ঠে কোনও চিনিযুক্ত বা আঠালো পদার্থ দীর্ঘ সময় আটকে থাকে, তখনই ব্যাক্টেরিয়া খনিজ পদার্থ নষ্ট করে গর্ত তৈরি করে। পরে সেটাই ক্যাভিটি বা কেরিজ়ে পরিণত হয়।
তাহলে কি বিস্কুট খাওয়াই বন্ধ করতে হবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, একেবারেই নয়। তবে সচেতনভাবে বেছে নিতে হবে কোন বিস্কুট খাবেন। অতিরিক্ত চিনি-সমৃদ্ধ বিস্কুট এড়িয়ে চলাই ভালো। আজকাল বাজারে অনেক চিনি-ছাড়া বা ডাইজেস্টিভ বিস্কুট পাওয়া যায়, যেগুলি তুলনামূলক কম ক্ষতিকর। তবে ঝুঁকি একেবারেই নেই, এমনটা ভাবা ভুল। তাই কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।
দাঁতের ক্ষতি কমাতে করণীয়:
- চকোলেট বা বিস্কুট — কোনওটিই অতিরিক্ত খাবেন না।
- খাওয়ার পর মুখ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন বা সম্ভব হলে ব্রাশ করুন।
- ডার্ক চকোলেট বেছে নিতে পারেন, কারণ এতে চিনির পরিমাণ কম।
- বিস্কুট বা চকোলেটের সঙ্গে দুধ বা বাদাম খেলে দাঁতের ক্ষতি কিছুটা কম হয়।
- নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিন এবং বছরে অন্তত একবার দন্তচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সামান্য সতর্কতায় দাঁতের ক্ষয় ও ক্যাভিটি হওয়া অনেকটাই রোধ করা যায়। চকোলেটের বদনাম অনেক দিন ধরেই আমাদের কানে এসেছে, কিন্তু এখন থেকে বিস্কুটের ক্ষেত্রেও সচেতন থাকা জরুরি। কারণ মিষ্টি হাসি ধরে রাখতে চাইলে দাঁতের যত্ন নেওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।
ব্যালকনির উপর উড়ালপুল! নাগপুরের সেতু স্মরণ করাচ্ছে ভোপালের ৯০ ডিগ্রি রেলসেতুর ঘটনার কথা

